You are currently viewing বুমস্লাং যতটা সুন্দর ততটাই ভয়ংকর সাপ
ছবিঃ বুমস্লাং সাপ (Boomslang Snake)

বুমস্লাং যতটা সুন্দর ততটাই ভয়ংকর সাপ

বুমস্লাং(Boomslang) সাপ Colubridae গোত্রের ভয়ংকর সাপ গুলোর মধ্যে একটি। এর বৈজ্ঞানিক নাম হল Chrysopelea paradisi . সাধারনত এ সাপকে ট্রি সাপ (Tree Snake) বলা হয়ে থাকে। আফ্রিকান এবং ডাচ ভাষায় বুম (Boom) শব্দের অর্থ গাছ। এ কারনে এ জাতীয় সাপের নাম বুমস্লাং(Boomslang) করা হয়। এ সাপ গাছে বাস করে তবে রোদ পোহানোর জন্য এরা ভূমিতে নেমে আসে।



পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সাপ এর তালিকপ্রাপ্ত বয়স্ক সাপ গুলো দৈর্ঘ্যে ৩.৩ হতে ৫.২ পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু সাপ ৬ ফিট পর্যন্তও লম্বা হয়ে থাকে। এ সাপের চোখ অন্যান্য সাপের চেয়ে সাধারণত বড় হয় এবং এর মাথা ডিম্বাকৃতি। পুরুষ সাপ গুলো সাধারনত হালকা সবুজ অথবা কালো বর্ণের হয়ে থাকে। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা সাপ গুলো বাদামি বর্ণের হয়ে থাকে।

ভয়ংকর সাপ
ছবিঃ বুমস্লাং সাপ (ভয়ংকর সাপ )

 

এ ধরনের সাপগুলো সাব-সাহারা আফ্রিকান অঞ্চলের সাভানা বনভূমিতে পাওয়া যায়। এ  সাপ শিকার ধরার সময় চ্যামেলিওন বা পাখির জন্য ঝোপঝাড়ে আবস্থান করে। যখন শিকার ধরতে যায় তখন এটি নিশ্চল ভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। এ সাপের শরীর এবং চোখের রঙ প্রায়ই পরিবর্তনশীল।



এটি যে পরিবেশে থাকে তখন নিজেকে ঐ পরিবেশের মত করে ক্যামোফ্লাজ/ ছদ্মবেশ ধারন করতে পারে।সহজ কথায় পুরোপুরি ছদ্মবেশযুক্ত আক্রমণ (camouflaged ambush) করতে পছন্দ করে। শিকার ধরার এ টেকনিক অনেক কাজে আসে।একই টেকনিক সাপ যদি নিজে বিপদে পড়ে তাহলে সেই বিপদ হইতে রক্ষা পাওয়ার জন্যও ব্যবহার করে থাকে।

আত্মরক্ষার কৌশলঃ

এ সাপ বিপদে পরলে আত্ম-রক্ষার জন্য একটি কৌশল অবলম্বন করে থাকে। শত্রুকে দেখলে এই সাপ আত্ম-রক্ষার জন্য এর ঘাড়কে স্ফীত করে এবং আঁশের মধ্যে অন্ধকার ত্বক দেখায় তখন এটি আক্রমন করতে পারে। এ সাপ কদাচিৎ ফণা তুললেও এর ফণা গুলি এমনভাবে সেট করা আছে যা মুখ হতে অনেক সামনে ছোবল মারতে পারে। এ প্রজাতির সাপ বাংলাদেশে সচরাচর পাওয়া যায় না। কেননা বাংলাদেশের পরিবেশ এবং আবহাওয়া এ সাপের বসবাসের জন্য অনূকুল নয়। বুমস্লাং সাপের বিষদাঁতে অনেক গুন বেশি শক্তিশালী বিষ আছে। এ বিষ ভিক্টিমের শরীরে অনেক ধীরে কিন্তু কার্যকর ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো শুরু করে।

বিষাক্ত সাপ
ছবিঃ বিষাক্ত বুমস্লাং

ভয়ংকর সাপঃ

ভয়ংকর প্রজাতির সাপের মধ্যে এ সাপই অত্যান্ত বিষাক্ত। এ প্রজাতির সাপের বিষ এতটাই কার্যকর এর সামান্য ০.০০০৬ মি.গ্রা. বিষ একটি পাখিকে কয়েক মিনিটের মধ্যে মেরে ফেলতে পারে। এ সাপের বিষ অতি দ্রুত কাজ করে। এটি হেমোটোক্সিন জাতীয় বিষ নিঃসরন করে থাকে। এটি মানবদেহে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতাকে নিস্ক্রীয় করে দেয় এবং বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের ফলে মানবদেহ মৃত্যু-মুখে পতিত হয়।



এছাড়া এ বিষটি মানবদেহের মস্তিষ্ক এবং পেশির টিস্যু গুলো রক্তক্ষরন এর জন্য দায়ী হয়ে থাকে। এর কারনে “ব্রেন হেমরেজ” হয়ে থাকে। এ ধরনের বিষ কারও শরীরে প্রবেশ করলে প্রাথমিক লক্ষন হিসাবে বমি বমি ভাব, নিদ্রাহীনতা, মাথাব্যাথা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। বুমস্লাং (Boomslang) প্রাপ্ত বয়স্ক হতে ২-৩ বছর সময় লাগে এবং তারা প্রজনন এর জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়।

সাপের বাসস্থানঃ

বন্য পরিবেশে এ ভয়ংকর সাপ ৮ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে এবং এরা অত্যান্ত নিরীহ প্রকৃতির হয়। সহজে এরা কাউকে আক্রমন করে না ; তবে যদি আক্রমন করে তবে তার বাচার সম্ভবনা খুব কম থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক সাপদের ফনায় ১.৬ -৮ মি গ্রা পর্যন্ত বিষ থাকে। সূত্রমতে, ১৯৫৭ সালে জুভেনাইল প্রজাতির বুমস্লাং এর কামড়ে একজন সরীসৃপ-উভচর প্রানী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর মৃত্যু ঘটে, যা তিনি সন্দেহ করে ছিলেন যে এটি মারাত্মক ডোজ তৈরী করতে পারে।

 

ভয়ংকর সাপ
ছবিঃ ভীতু বুমস্লাং সাপ

তবে এ প্রজাতির সাপের বিষের প্রতিকার তৈরী হয়েছে। এটি ১৯৪০ এর দশকে তৈরী করা হয়েছিল। দক্ষিন আফ্রিকার কিছু  প্রযোজকগন বুমস্লাং (Boomslang) এর প্রবর্তন, ব্যবহার  করার জন্য এর বিষের প্রতিকার একচেটিয়া ভাবে তৈরি করেন ; ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে।



তবে এর চিকিৎসা করতে গেলে ২৪-৪৮ ঘন্টা অ্যান্টি-ভেনম  ছাড়াই সম্পূর্ণ রক্ত সঞ্চয়ের প্রয়োজন হয় যা অনেকটা জটিল প্রক্রিয়া।

পরিশেষে বলা যায় যে, বুমস্লাং ভিতু প্রকৃতির ভয়ংকর সাপ । এটি কামড় সাধারণত তখনই মারে; যখন কেউ  সাপটিকে হ্যান্ডেল করতে, ধরতে অথবা হত্যা করতে চেস্টা করে। যখন কেউ সাপটির মুখো-মুখি হয় তখন সাপটি  S আকৃতির মত অবস্থান করে থাকে শত্রুকে আক্রমন করার জন্য। বর্তমানে বিশ্বের বিষধর সাপদের তালিকায় এরা অবস্থান করছে।

Facebook Comments

YappoBD

YappoBD-হলো poshupakhi.com এর একমাত্র স্বত্তাধীকারি। এই ওয়েবসাইটের সকল প্রকার কন্টেন্ট ইয়াপ্পোবিডি কর্তৃপক্ষ দ্বারা লিখিত, পরিমার্জিত এবং এটি ইয়াপ্পোবিডি এর অঙ্গসংস্থান।