হরিণের আধ্যাত্মিক অর্থ হলো কৃতজ্ঞতা, দয়া এবং নির্দোষতা। ইংরেজীতে হরিণ কে ডিয়ার (Deer) বলা হয়। হরিণ শক্তি এবং সংকল্পের প্রতীক। হরিণের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আছে লম্বা, শক্তিশালী পা, লম্বা কান এবং ছোট লেজ। শারীরিক ভাবে হরিণের অনেক বৈচিত্র্য দেখা যায়। সবচেয়ে বড় হরিণ হল চামরি গাই যেটা প্রায় ২.৬ মিটার (৮.৫ ফুট) লম্বা এবং ওজন হয় ৮০০ কিলোগ্রাম (১,৮০০ পাউন্ড)। এরা কাধ থেকে লম্বায় হয় ১.৪–২ মিটার (৪.৬–৬.৬ ফুট) এবং ওজন হয় ২৪০–৪৫০ কিলোগ্রাম (৫৩০–৯৯০ পাউন্ড)।
বিপরীতভাবে উত্তরের পুডু হল বিশ্বের সবচেয়ে ছোট হরিণ। এটা কাধ থেকে প্রায় ৩২–৩৫ সেন্টিমিটার (১৩–১৪ ইঞ্চি) লম্বা হয় এবং ওজন হয় প্রায় ৩.৩–৬ কিলোগ্রাম (৭.৩–১৩.২ পা)। দক্ষিণের পুডুগুলো উত্তরের চেয়ে একটু লম্বা আর ওজনদার হয়। বেশিরভাগ প্রজাতিতেই পুরুষ হরিণরা স্ত্রী হরিণের চেয়ে বড় হয়।হরিণরা বিচরণকারী জীব, তারা প্রধানত পাতা খায়।
তাদের পাকস্থলি ছোট, জাবর কাটার উপযোগী এবং উচ্চ পুষ্টির প্রয়োজন। গৃহপালীত প্রাণী বা ভেড়ার মত তারা বেশি পরিমানে নিম্ন মানের আঁশযুক্ত খাদ্য খায় না বরং সহজে হজম হয় এমন খাবার যেমন কচি পাতা, নরম ঘাস, অঙ্কুরিত চারা, নরম ফল, গাছের ডাল, ছত্রাক এবং শৈবাল খায়।হরিণের ৪৩টি প্রজাতির মধ্যে চমৎকার ৫টি হরিণের বর্ননা নিচে দেওয়া হলোঃ

সাদা লেজের হরিণ (White-tailed deer)
সাদা লেজযুক্ত হরিণ হলো হোয়াইটেল বা ভার্জিনিয়া হরিণ হিসাবে পরিচিত, সাদা লেজের হরিণ উত্তর আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা, ইকুয়েডর এবং দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণে পেরু এবং বলিভিয়ার দক্ষিণে বসবাস করে। এটি নিউজিল্যান্ডে, ক্যারিবীয় অঞ্চলের সমস্ত বৃহত্তর অ্যান্টিলিস (কিউবা, জামাইকা, হিস্পানিয়োলা, এবং পুয়ের্তোরিকো ) এবং ইউরোপের কিছু দেশে যেমন ফিনল্যান্ড, রোমানিয়া, সার্বিয়া, জার্মানেও, ফ্রান্স। আমেরিকাতে, এটি সর্বাধিক বিস্তৃত এই হরিণ। এটি একটি মাঝারি আকারের হয়ে থাকে। সুন্দর বনের বাঘ এবং অন্যান্য প্রানীদের সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন

বড় শিংঘা বা সাম্বার হরিণ (Sambar Deer)
ইংরেজীতে সাম্বার ডিয়ার (Sambar Deer) বলে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম রুসা উনিক্লোর। হরিণের পরিবারের মধ্যে এরা সবচেয়ে বড়। এদের দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পূর্ব ও উত্তর- পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ী বনভূমিতে বড় শিংঘা হরিণ দেখা যায় বলে জানা গেছে।
এছাড়াও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, মালয় উপদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ও বোর্নিও দ্বীপ সম্বর হরিণের আবাসস্থল। চীনের দক্ষিণাঞ্চল, হাইনান দ্বীপ ও তাইওয়ানেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। একটি পূর্ণবয়স্ক হরিণের উচ্চতা কাঁধ পর্যন্ত ৪০ থেকে ৬৩ ইঞ্চি ও ওজন ১৫০ থেকে ৩২০ কেজি পর্যন্ত হয়। এদের দেহ ছোট ছোট মেটে বা হলদে মেটে বর্ণের লোম দ্বারা আবৃত থাকে। পুরুষ হরিণের শাখাযুক্ত বৃহৎ শিং (প্রায় ৪৩ ইঞ্চি লম্বা) থাকে।

প্যারা ডিয়ার (Hog Deer)
প্যারা হরিণ সবচেয়ে পুরাতন প্রানী। এদের ইংরেজিতে হগ ডিয়ার (Hog Deer) বলে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম এক্সিস পরসিনো।এদের দেহ পেশীবহুল কম। এটা ছোট আকারের প্রাণী এবং কাঁধের উচ্চতায় প্রায় ৭০ সেন্টিমিটার পরিমাপ করে। হগ হরিণটির তুলনামূলকভাবে ছোট পা রয়েছে যার
দেহটি পিছনের চেয়ে সামনের দিকে কম বড় হয়। মুখটি সংক্ষিপ্ত এবং খুটি আকারের। এগুলি হলুদ বা লালচে রঙের সাথে বাদামি এবং কিছু চুলের সাদা টিপস থাকায় কখনো কখনো দাগযুক্ত চেহারা হয়। কপালে সংক্ষিপ্ত পেডিকেল গুলিতে লাগানো হয় যা ৬০ সেমি পর্যন্ত বাড়তে পারে। হগ হরিণের ওজন ৫০-১১০ কেজি হতে পারে।

খচ্চর হরিণ (Mule deer)
মূলে ডিয়ার (mule deer) নামে পরিচিত। খচ্চর হরিণ পশ্চিম আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে খুব দেখা যায়। এগুলির নাম তাদের বড় আকারের কানের জন্য করা হয়েছে যা খচ্চরের কানের অনুরূপ। খচ্চর হরিণ আকারে আরও বড়, এবং একটি কালো টিপযুক্ত সাদা লেজ এবং র্যাম্পের উপর সাদা প্যাচ রয়েছে। এগুলির কাঁধ তিন ফুট লম্বা হয় এবং ১০০ থেকে ৩০০ পাউন্ডের মধ্যে যে কোনও জায়গায় ওজন হতে পারে। তাদের দুর্দান্ত শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি রয়েছে যা বিপদগুলির কাছে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে।

চিতল বা চিত্রা ডিয়ার(chital বা cheetal)
চিতল বা চিত্রা হরিণের ইংরেজীতে চিতল ডিয়ার (chital বা cheetal) বলা হয়। এদের বৈজ্ঞানিক নাম এক্সিস ডিয়ার (axis)। চিতল বা চিত্রা হরিণের দেহ লালচে বাদামী লোমযুক্ত চামড়া দ্বারা আবৃত যাতে সাদা সাদা ফোঁটা দেখা যায়। গলার নিচে, পেট, লেজের নিচে ও চার পায়ের ভেতরের চামড়ার বর্ণ সাদা।
হাঁটু থেকে পায়ের খুর অবধি হাল্কা সাদা বা ধুসর রং রয়েছে।এদের কাঁধ বরাবর একটি গাঢ় রেখা পিঠ দিয়ে লেজ পর্যন্ত চলে গিয়েছে। পূর্ণবয়স্ক চিত্রা হরিণের কাঁধ পর্যন্ত উচ্চতা ৩০ থেকে ৩৮ ইঞ্চি হয়। দেহ লম্বায় ৪২ থেকে ৫৫ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। লেজের দৈর্ঘ্য ৮ থেকে ১২ ইঞ্চি। ওজন ৭৫ থেকে ১০০ কেজি (১৬৫ থেকে ২২০ পাউণ্ড) পর্যন্ত হয়।

বিভিন্ন পশুপাখির অজানা তথ্য সমুহ জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।