আমাদের দেশে জীব বৈচিত্র্যের কারনে বিভিন্ন ধরনের প্রানী এবং জীবজন্তুর দেখা মিলে। এই কারন গৃহপালিত প্রানী থেকে শুরু করে বন্য প্রানী আমাদের দেশে রয়েছে। তবে অন্যান্য প্রানীদের চেয়ে পাখিরা উল্লেখযোগ্য। কারন আকাশে উড়ন্ত পাখি দেখতে যেমন ভাল লাগে তেমনিভাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য তুলে ধরে। বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল হলেও চড়ুই পাখি নামেরও এক ধরনের পাখি আছে।
এটা জনবসতির মধ্যে থাকতে পছন্দ করে এই কারনে একে হোম স্প্যারো চড়াই বলা হয়ে থাকে। অনেকে এটিকে গৃহস্থলির চড়াই বলে থাকে। এরা আকারে ছোট হয় নিজেদের বাসা নিজেরাই তৈরি করে। শুকনো খড়কুটো, ঘাস লতা পাতা এবং কড়ির গাছের কাঠ দিয়ে এই চড়ুই পাখির বাসা তৈরি করে। আমাদের চারপাশে কোথাও কড়ির গাছ থাকলে সেই গাছে এই পাখিকে দেখতে পাওয়া যাবেই। কড়ি কাঠ অন্য যে কোন কাঠে চেয়ে একটু দুর্বল প্রকৃতির। কত ধরনের চড়ুই পাখি হয়ে থাকে তা জেনে নিইঃ
সং স্প্যারোঃ
এরা গায়ের রং ধূসর বাদামি বর্নের এবং ঠোট তীক্ষ্ণ প্রকৃতির হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এদের দেখা না মিললেও আমেরিকা এবং কানাডাতে এদের সহজেই দেখা মিলে। এরা যে জায়াগায় থাকে সেখানের পরিবেশের সাথে নিজেদের খাপখাইয়ে নিয়েছে। এদের আকার এবং গান গাওয়ার ক্ষমতা ঐ অঞ্চলের জলবায়ুর উপর নির্ভর করে থাকে। বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালে পুরুষ পাখিরা গান গায় এবং এক ডাল থেকে অন্য ডালে উড়ে বেড়ায়। এভাবে তারা স্ত্রী পাখিদের মিলনের জন্য আকৃষ্ট করতে থাকে। স্ত্রী এবং পুরুষ প্রজাতির পাখি এমন কোন বাসা খোজে যেখানে তারা একসাথে থাকতে পারে।
ফিল্ড স্প্যারোঃ
নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে এদের খোলা মাঠে দেখা যায়। এদের শরীরও ধূসর রঙের কিন্তু উপরের পাখির থেকে সামান্য আলাদা। এদের ডানার উপর স্ট্রাইপ করা দাগ আছে এবং এদের ঠোঁট গোলাপি রঙের। এদের আমেরিকার পূর্ব অঞ্চলের দিকে দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু এদের সংখ্যা দিন দিন কমতেছে। বিলুপ্ত প্রায় প্রানী বা পখিদের তালিকায় এদের স্থান নিচ থেকে উপরের দিকে উঠছে।
হাউজ স্প্যারোঃ
এদের যে কোন লোকাল এরিয়ার সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে সহজ হয়। এই প্রজাতির পাখি অনেক জনপ্রিয় হওয়ার কারনে আমেরিকা, মেক্সিকো এবং কানাডার কিছু অংশে দেখতে পাওয়া যায়। এমনকি এরা মানুষের তৈরি বিল্ডিং স্ট্রাকশ্চারে এরা থাকতে পছন্দ করে। এদের আমেরিকাতে দেখা গেলেও ১৮৫১ সালে ইউরোপে এদের দেখতে পাওয়া যায়। অন্যান্য আরও পাখিদের বাসা হোম স্প্যারো ছিনিয়ে নেয়। অন্যান্য সুন্দর পাখিদের নাম সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন
ফক্স স্প্যারোঃ
নাম শুনে এদের শিয়ালের সাথে সম্পর্ক আছে এমন মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এমনটা কিছুই নয়। লাল এবং কমলার সংমিশ্রনের যে রং হয় তেমন দেখতে এক ধরনের শিয়াল আছে। সেই শিয়ালের গায়ের রঙের সাথে এদের মিল রয়েছে বিধায় এমন নামকরন করা হয়েছে। বেশিভাগ চড়ুই পাখি দেখতে একই রকমের এবং খুব বেশী বৈচিত্র্য দেখতে পাওয়া যায় না। তবে এমন কিছু প্রজাতির চড়ুই পাখি আছে যা একটু রঙিন হয়। এই কালার ভ্যারিয়েশন উত্তর আমেরিকা অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। ঝোপ ঝাড় কিংবা জঙ্গলের মধ্যে থাকার কথা থাকলেও এরা মানুষের আশেপাশে থাকা পাখির বাসা বা ফিডার এর আশেপাশে দেখতে পাওয়া যায়।
সোয়াম্প স্প্যারোঃ
উত্তর আমেরিকার পূর্ব দিকে দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চল জুড়ে এদের দেখতে পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালে প্রজননের সময় এরা নিজেদের জায়াগা থেকে সুদুর কানাডা পর্যন্ত গিয়ে থাকে। শীতকালে এরা পুনারায় নিজেদের জায়াগায় অর্থাৎ আমেরিকা এবং মেক্সিকো অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। সোয়াম্প ফরেস্ট বলতে জল এবং স্যাঁতস্যাঁতে অঞ্চল যে বনে থাকে। সিলেট বিভাগে এমন সোয়াম্প ফরেস্ট আছে। সোয়াম্প স্প্যারো স্যাঁতস্যাঁতে জায়াগায় এবং নিজেদের ঝোপঝাঁড় এবং গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকে।তবে অন্যান্য চড়ুই পাখির চেয়ে এদের পা লম্বা হয়ে থাকে। সোয়াম্প ফরেস্ট এর মত সুন্দরবনও পৃথিবীর ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট।
সাদা চড়ুইঃ
শীতকালে এদের বেশী পরিমানে দেখা যায় এবং অন্যান্য সাধারন চড়ুই পাখির মত দেখতেই। শীতকালে এদের সাধারন ভাবে দেখা গেলেও এরা প্রকৃত ভাবে কানাডা থেকে আসে। অতিথি পাখিরা সারাবছর ভ্রমন করে থাকে। এদের ঠোঁট এবং শরীরের গায়ের রং অন্যান্য পাখিদের চেয়ে সামান্য আলাদা প্রকৃতির হওয়ার কারনে এদের সহজেই পৃথক করা যায়। এদের সম্পূর্ন মুখের প্যাটার্ন এবং সাদা স্ট্রাইপ যুক্ত পালক এদের সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে।
পরিশেষে, চড়ুই পাখি সম্পর্কে এবং এদের বিভিন্ন প্রজাতি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন তথ্য জানলাম। আপনাদের চড়ুই পাখি সম্পর্কে কিছু জানা থাকলে কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। লেখাটি ভাল লাগলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। ততক্ষন পর্যন্ত ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।