বর্তমান সময়ে মানুষের মধ্যে মাছকে পোষা প্রানী হিসেবে রাখা প্রবনতা বেশী দেখা যায়। মাছের ক্ষেত্রে পোষা প্রানী শব্দটি বেমানান লাগে ঠিকই কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষের রুচি এবং ইচ্ছার পরিবর্তন হচ্ছে। এজন্য মানুষ মাছকে তার নিজের বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটে অ্যাকুরিয়ামে রাখতে চায়। এতে করে শখ পূরনের পাশাপাশি বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। পোষা প্রানী কুকুর, বিড়াল রাখার জন্য যদি আপনার পর্যাপ্ত পরিমান তবে মাছকে পোষা প্রানী হিসেবে আপনি রাখতে পারেন। কারন অন্য যে কোন পোষা প্রানীর চেয়ে অ্যাকুরিয়ামে মাছ পুষতে জায়াগা অনেক কম লাগে। কুকুর কিংবা বিড়াল পুষতে গেলে আপনাকে অতিরিক্ত সময় দিতে হয় এবং এদের যত্ন নিতে হয় কিন্তু মাছ অ্যাকুরিয়ামে রাখলে খুব বেশি পরিমান সময়ও দিতে হয় না।
মাছকে পোষা প্রানী হিসাবে রাখার সুবিধাঃ
- অন্য যে কোন প্রানীর চেয়ে এরা বেশি শান্তশিষ্ট। সহজে কোন ধরনের হৈ চৈ কিংবা শব্দ করে না।
- অন্য যে কোন পোষা প্রানীর চেয়ে এরা সবচেয়ে বেশি সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে পারা যায়
- এদের রাখার জন্য ভরন পোষনের খরচও কম অন্য যে কোন পোষা প্রানীর চেয়ে।
- এরা দেখতে যেমন সুন্দর দেখায় একই সাথে শান্ত নিস্তব্দ পরিবেশ বজায় রাখে।
- অ্যাকুরিয়ামে মাছে রাখার জন্য কোন ধরনের ভেটিনারী ডাক্তারের কাছে নিতে হয় না। কিছু কিছু বিষয় লক্ষ্য করলেই মাছ সুস্থ থাকে।
- যাদের মধ্যে দায়িত্বজ্ঞান কম, তাদের দায়িত্বশীল করে তুলতে অনেক সময় বাড়ির ছোটদের টাইম মত মাছকে খাবার দেওয়ার কাজে লাগানো হয়। এভাবে তারা রুটিনের মধ্যে আসলেও আসতে পারে।
- অন্যান্য পোষা প্রানীদের বাড়ীতে রাখলে এরা দৌড় ঝাপ করে, বিশৃংখলা সৃষ্টি করে আবার মাঝে মাধ্যে বাড়ির ফার্নিচার, খাবার সহ অন্যান্য আরও কিছু ধ্বংস করে থাকে। কিন্তু অ্যাকুরিয়ামে রাখা মাছ এসব ঝামেলা করতে পারে না।
মাছকে পোষা প্রানী হিসাবে রাখার আসুবিধাঃ
- কিছু কিছু মাছ দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি সমুদ্রে পাওয়া যায়। এই কারনে কিছু কিছু প্রজাতির মাছের দাম বেশি পড়ে। প্ল্যাটিনাম অ্যারোওয়ানা নামের মাছের চাহিদা বেশী দেখতে সুন্দর হওয়াই। তেমনি এর দামও বেশি। Angel Fish নামের মাছও দেখতে সুন্দর এবং বেশিভাগ মানুষ অ্যাকুরিয়ামে রাখে এই মাছটিকে।
- বিদেশী মাছ কিনতে গেলে আপনার মনে পারে এদের দাম অনেক বেশি এবং এই মাছের মেইনটেনেন্স কস্ট বেশি। মেইনটেনেন্স কস্ট বলতে মাছ,মাছের ট্যাংক, মাছের খাবার এবং অ্যাকুরিয়ামের ভিতরের পরিবেশ তৈরি করার জন্য বিভিন্ন বিষয়াদি।
- অ্যাকুরিয়ামের মধ্যে যদি লোনা পানির মাছ থাকে তাহলে আপনাকে পানির বৈশিষ্ট্য এবং PH এর মান ঠিক থাকতে হবে।
- মাছ কখনই একই জাতের সাথে ঘুরাফেরা করতে পছন্দ করে না। অন্যান্য কুকুর বিড়ালের ক্ষেত্রে যেটা দেখা যায়।
- কিছু কিছু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।
মিঠা পানির নাকি লোনা পানির মাছ পোষার জন্য ভালঃ
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, পোষা মাছ হিসেবে লোনা পানির মাছ ভাল হবে নাকি মিঠা পানির মাছ ভাল হবে? এটি সহজ ভাবে বুঝার বিষয় হল মানুষ কোনটি পছন্দ করে। মিঠা পানির মাছ মূল্যের দিক থেকে বেশি সাশ্রয়ী। এজন্য যারা পূর্বে অ্যাকুরিয়ামে মাছ পুষে নি এবং এই বিষয়ে নতুন তাদের মিঠা পানির মাছ থেকেই শুরু করা উচিত এবং এর সাথেই শুরু করা উচিত।
লোনা পানির মাছ অ্যাকুরিয়ামে শুরুতেই রাখতে গেলে মাছদের জন্য পরিবেশ ঠিকভাবে ব্যালেন্স করাই মুশকিল হয়। তবে অ্যাকুরিয়ামের সামুদ্রিক মাছ গুলো যেমন সুন্দর তেমনি আকর্ষনীয় হয় দেখতে। তবে আপনাকে অ্যাকুরিয়ামের পানি যে কোন এক ধরনের হতে হবে। হয় সম্পূর্ন লোনা পানির না হয় সম্পূর্ন মিঠা পানির।
মিঠা পানির অ্যাকুরিয়ামঃ
মিঠা পানির অ্যাকুরিয়াম এর মেইনটেনেন্স খরচ কম। লোনা পানির অ্যাকুরিয়ামের চেয়ে এই ধরনের অ্যাকুরিয়ামের বেশ সাশ্রয়ী মূল্যের হয়ে থাকে। মিঠা পানির অ্যাকুরিয়ামে টেট্রা, বেটা ফিশ এবং গোল্ডফিশ থাকে। এদের ফিলট্রেশন সিষ্টেম অপারেট করা অনেক সহজ হয়। এদের কাচ গুলো লোনা পানির অ্যাকুরিয়াম গ্লাস এর চেয়ে হালকা কোয়ালিটির হয়। অতটা শক্তিশালি হওয়ার দরকার নেই।
লোনা পানির অ্যাকুরিয়ামঃ
মিঠা পানির মাছের চেয়ে লোনা পানির মাছের অ্যাকুরিয়ামের সাইজ বড় এবং লম্বা হয়ে থাকে। মিঠা পানির ট্যাংকার এর চেয়ে এদের দাম তুলনা মুলকভাবে বেশী। লোনা পানির ট্যাংকারের মধ্যে পানির Ph এর মাত্রা ভালভাবে নির্দিষ্ট করে রাখতে হয়। যা লোনা পানির ফিলট্রেশনের কয়েকটি ব্যবস্থা আছে। যথাক্রমে
- মেকানিক্যাল ফিলট্রেশন
- কেমিক্যাল ফিলট্রেশন
- বায়োলজিক্যল ( জীবন্ত পাথর; সমুদ্রে যে সব পাওয়া যায় )
কি কি মাছ রাখতে পারবেনঃ
চাইলেই অ্যাকুরিয়ামে মাছ পোষা বা বড় আকারের মাছ রাখা যায় না। বরং ছোট আকারের মাছ গুলোর জন্য অ্যাকুরিয়াম পার্ফেক্ট। অ্যাকুরিয়াম রাখা হয় বাড়ির সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য। এই জন্য মানুষ কালার ফুল বা রঙ্গিন মাছ বেশি পছন্দ করে। এদের মধ্যে ক্লাউন ফিশ উল্লেখযোগ্য। ক্লাউনফিশ ভিন্ন ভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। এদের কারনেই সমুদ্রের তলদেশ এত বেশি বৈচিত্র্যময়। Finding Nemo মুভিতে এদের দেখে থাকবেন। এছাড়াও জেব্রা পেলিকোস, চিচলিড, গোল্ডফিশ, বেটাফিশ সহ অন্যান্য আরও মাছ রাখা যায়।
পরিশেষে, মাছ পোষা শখের বিষয়। বাড়িতে অ্যাকুরিয়ামে মাছ থাকলে ছোট বাচ্চারাও আনন্দ পায়। লেখাটি পড়ে আশা করা যায় আপনারা কিভাবে মাছ পুষবেন তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। লেখাটি ভাল লাগলে আপনার টাইমলাইনে শেয়ার করুন। ততক্ষন পর্যন্ত ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।