আমাজন বন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বনাঞ্চল। এই বন পৃথিবীর কয়েকটি দেশের জুড়ে অবস্থিত। ব্রাজিল, বলভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর, কলাম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, গায়েনা এবং সুরিনাম এসব দেশ জুড়ে আমাজন বন অবস্থিত। এছাড়াও ফ্রন্সের সামুদ্রিক অঞ্চলের পাশে আমাজন বন বা আমাজন রেইনফরেস্ট আবস্থিত। এই রেইন ফরেস্টে জীব বৈচিত্র্যের বিপুল সমাহার রয়েছে। আমাজন রেইনফরেস্টে প্রানীদের পাশাপাশি দীর্ঘ লম্বা গাছেরও দেখা মিলে। কিছু কিছু গাছ এত বেশি লম্বা যে মাটি হতে গাছের শীর্ষ চূড়া কিংবা সূর্যের আলো দেখা যায় না সহজে। রিসার্চারদের মতে আমাজন বন তথা রেইন ফরেস্টের গাছ গুলো সর্বোচ্চ ২০০ -২৯০ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তবে আমাজন জঙ্গল এর সব জায়গায় এমনটি হয় না। কিছু কিছু জায়গায় সূর্যের আলো পৌছায়।
আমাজন জঙ্গল এ প্রানীদের কোন রকমের কমতি নেই। বরং আমাজন রেইনফরেস্টে প্রানী কতগুলো আছে তা রিসার্চ করে এখনও শেষ হয়নি। প্রানীদের বৈচিত্র্য এত বেশি নিত্যদিন নতুন নতুন প্রজাতির প্রানীদের প্রজাতির দেখা মিলছে। এই কারনে প্রানীদের নতুন প্রজাতির উদ্ভবের যে ধারা তা কখনও শেষ হবার নয়। আমাজন বন এর পাশ দিয়ে আমাজন নদী প্রবাহিত হয়েছে। এই নদী দক্ষিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় নদী এবং বিপুল পরিমান পানি প্রবাহিত করে। নীলনদ এর তুলনায় আমাজন নদী সবদিক থেকে এগিয়ে এবং আমাজন নদী মান্টারো নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়েছে। আমাজন নদী প্রশস্ততার দিক থেকে নীলনদ এর চেয়ে দ্বিগুন পরিমান প্রশস্ত।
সূর্যের আলো কেন পৌছে নাঃ
আমাজন বনে ঘন গাছপালার কারনে সূর্যের আলো ভালমত পৌছাইতে পারে না। গাছের পাতা এত বেশি ঘন হয়ে থাকে যে দিনের বেলাতেও আমাজন জঙ্গল এর কোন কোন অংশ অন্ধকার হয়ে থাকে। গাছের নিচের অংশের এবং মাটির আর্দ্রতা বেশী পরিমানে থাকে। তবে এমন হলেও তা কোন ভাবে সমস্যার কারন হয় না। বরং এটি আমাজনের ইকোসিস্টেমের অংশ। এখানে যে কোন কিছু পচন শুরু হয়। গাছগুলো ঘন এবং লম্বা হওয়ার কারনে বিশাল বনের গাছপালা বা গাছের পাতা মোটা আস্তরন তৈরি করে। এই কারনেই মূলত সূর্যের আলো জঙ্গলের নিচে পৌছে না। আমাজন জঙ্গলের মানুষ এর জীবনযাত্রা এবং অন্যান্য আরও মানুষের জীবনযাত্রা কখনও এক হয় না। বরং সম্পূর্ন ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে।
আমাজন রেইনফরেস্টে যেসব প্রানীর দেখা মিলবে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলঃ
সবুজ অ্যানাকোন্ডা সাপঃ
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাপ গুলোর সবুজ অ্যানাকোন্ডা অন্যতম। এরা লম্বায় ৩০ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এই সাপ ১২ ইঞ্চির মত মোটা হয়ে থাকে। ওজনের দিক থেকে এরা প্রায় ২৫০ কেজি বা ৫৫০ পাউণ্ড। দক্ষিন আমেরিকার অঞ্চলগুলোতে এই সাপের দেখতে পাওয়া যায়। প্রাপ্ত বয়স্ক সবুজ অ্যানাকোন্ডা সাপ হরিন কিংবা বড় সাইজের পাখি খেয়ে থাকে। পৃথিবীর অন্যান্য মানুষখেকো প্রানীগুলোর মধ্যে এরা একটি। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক সাপ আস্ত একটা মানুষকে খেয়ে ফেলছে এমন ঘটনার নজির নেই বললেও চলে। এই সাপগুলো বিষাক্ত প্রকৃতির হয় না বরং দাঁত এবং শক্তিশালী চোয়ালের কারনে শিকারির মৃত্যু হয়। অন্যান্য আরও বড় সাপ সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন।অনেকে স্বপ্নের মধ্যে সাপ দেখে থাকে এবং এই কারনে ভয়ও লাগে কিন্তু স্বপ্নে সাপ দেখার কারন কি বুঝতে পারে না।
কাচের মত ব্যাঙঃ
এই প্রজাতির ব্যাঙ আমাদের চারপাশে যেসব ব্যাঙ দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোর চেয়ে সম্পুর্ন আলাদা প্রকৃতির। আমাদের বাসা বাড়ির চারপাশে কুনোব্যাঙ এবং কোলাব্যাঙ এর দেখা মিলে। কিন্তু আমাজন রেইন ফরেস্টে গ্লাস ফ্রগ দেখা মিলে। এদের এমন নামকরনের পিছনে উল্লেখযোগ্য কারন হল এদের পেটের চামড়া এতটাই পাতলা প্রকৃতির হয়ে থাকে যে পেটের ভিতরে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গ বা অর্গান দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্য এবং দক্ষিন আমেরিকার আর্দ্র বনাঞ্চল অথবা জায়গায় এদের দেখা মিলবে।
গোলাপি ডলফিনঃ
আমাজন এর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আমাজন নদীতে অনেক প্রানীর দেখা মিলে। ডলফিন পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চল বা সাগর-মহাসাগরে দেখা মিলে। কিন্তু আমাজন নদীতে গোলাপি রঙের ডলফিন এর দেখা মিলবে। স্বাভাবিক ভাবে ডলফিন মানুষের পছন্দনীয় প্রানীদের মধ্যে একটি। কিন্তু গোলাপি রঙ্গের ডলফিন কিছু সংখ্যকই বর্তমানে রয়েছে। এদের প্রজাতির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তবে এরা নিজেদের খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে অনেক বেশি পরিমান বাছ বিচার করে থাকে। আমাজন নদীতে গোলাপি ডলফিন পাওয়া গেলেও পদ্মাসেতু এর নিচ দিয়ে পার হতে ডলফিনের কি টোল দিতে হয়?
পুটোঃ
এই প্রানী দেখতে আমাদের দেশের প্যাঁচা এর মত। এরা ছদ্মবেশ ধারন করতে বেশ পটু। এরা নিশাচর প্রানী হওয়ার কারনে রাতের বেলায় ঘুরে বেড়ায় এবং খাদ্য শিকারে বের হয়। দিনের বেলায় এরা ঘুম পাড়ে। নিশাচর প্রানী নিয়ে এর পূর্বে আর্টিকেল লেখা আছে। এরা নিজেদের এমনভাবে ছদ্মবেশ ধারন করে থাকে যে সহজে এদের খুঁজে বের করা যায় না। পরিবেশের সাথে নিজেকে মিশে ফেলে এবং চুপচাপ থাকে; নড়াচড়া করে না। এই কারনে এরা শিকার ধরার জন্য এদিক ওদিক না গিয়ে এক জায়গায় চুপচাপ বসে থাকে। শিকার নাগালের মধ্যে আসলেই ধরে ফেলে। এতে করে এদের এনার্জি অনেক বেশী সেভ হয়।
পরিশেষে, আমাজন জঙ্গল এর সর্বত্র আলো একই পরিমানে পৌছে না। এত বিপুল পরিমানের গাছ সূর্যের আলো ব্যবহার করে সালোকসংশ্লেষন পদ্ধতিতে নিজেদের খাদ্য তৈরি করে। এই কারনে এসব গাছের বৃদ্ধি দ্রুতই হতে থাকে। আলো গাছদের নিকট আলো যে পরিমানই পৌছাক না কেন গাছের খাদ্য তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পরিমান আলো ঠিকই পৌছে। লেখাটি পড়ে কেমন লাগল তা কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং আপনার সোশ্যাল মিডিয়াতে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন। ততক্ষন পর্যন্ত ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।