সুন্দর ডলফিন বুদ্ধিমান প্রানীদের মধ্যে অন্যতম। প্রাণীদের বুদ্ধিমত্তার উপর ভিত্তি করে মানুষ অনেক প্রাণীকেই বেশি ভালোবাসে। ঠিক তেমনিভাবে বুদ্ধিমান প্রাণীর তালিকায় এবং মানুষের পছন্দের শীর্ষে সামুদ্রিক প্রাণী ডলফিন রয়েছে। এরা অনেকটা কৌতুহলী এবং এদের সঙ্গীদের সাথে সব সময় বিশ্বাসের পরিচয় দেয়। মানুষের সাথে এরা মিশুক প্রকৃতির যে মাছ ধরা এবং সাঁতার কাটতে ও মানুষের সাথে খেলতে পছন্দ করে। এরা অ্যাক্রোবেটিক এর মাধ্যমে মানুষ সাধারণ মানুষদের মনোরঞ্জন করে থাকে।
এদের মাংসল শরীর দেখতে অনেক সুন্দর এবং তুলতুলে হাওয়ায় যেকোনো মানুষের আদর করতে চাই। তবে কিছু কিছু প্রজাতির ডলফিন আছে এরা সাধারণত ২ মিটার এর বেশি বড় হয় না। তবে তিমি মাছ এবং ডলফিন মাছের কথা আমাদের মুখে সর্বদাই চলে আসে। এমনকি ছোট বাচ্চাদের ছবি দেখে পড়া এমন বইয়েও এদের দেখা যায়। ফলে ছোট অবস্থায়ও তিমি মাছ এবং ডলফিন মাছ এর সম্পর্কে জানতে পারে।
ডলফিন মাছকে বাংলা নাম শুশুক। আমাদের কিছু নদীতেও ছোট আকারের ডলফিন মাছ পাওয়া যায়। তবে এদের সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায় বঙ্গোপসাগরে। বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড নামে একটি জায়গা আছে যেখানে সমুদ্র কিছুটা উত্তাল থাকে। এ কারনে এমন সব জায়গায় যেখানে মানুষের আনাগোনার স্কোপ খুবই কম সেখানে সামুদ্রিক প্রানীর দেখা মিলে। সামুদ্রিক প্রানী এবং সামুদ্রিক মাছ শব্দ দুটি একই মনে হলেও এদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। সব সামুদ্রিক প্রানী মানুষের জন্য উপকারী হয় না। তবে সামুদ্রিক মাছ গুলোর অধিকাংশই খাওয়া যায়।
মাওই ডলফিনঃ
ছোট ডলফিনদের আলোচনা আসলে এদের নাম সর্বপ্রথম আসে। হেক্টর নামক ডলফিন হতে এদের উৎপত্তি। নিউজিল্যান্ড এবং এর আশেপাশের দ্বীপগুলোতে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এ ডলফিনের নাম একটি দ্বীপের নাম অনুসারে হয়েছে। এরা দৈর্ঘ্যে ১.২ হতে ১.৪ মিটার পর্যন্ত এবং ওজনে ৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
হেভাসাইড ডলফিনঃ
এদের দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলে দেখা যায়। এরা দৈর্ঘ্যে ১.৮ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। ওজনের দিক থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ কেজি পর্যন্ত হয়। এদের শরীরে সাদা কালোর মিশ্রন এদেরকে অপূর্ব সুন্দর রুপে প্রকাশ করে।সুন্দর ডলফিনের বৈশিষ্ট্য যেন এ প্রজাতির অনুরূপ।এরা পানির মধ্যে চিৎ সাঁতার অথবা লাফিয়ে লাফিয়ে চলাচল করা পছন্দ করে।অন্য সব প্রজাতির ডলফিন থেকে এরা সবচেয়ে বেশি মানুষদের সাথে খেলাধুলা করতে বেশি পছন্দ করে। ছবিঃ হেভসাইড ডলফিন
সামুদ্রিক তারা মাছ সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন
কোমারসন্স ডলফিনঃ
এরা হেভসাইট ডলফিন হতে ঠিক সম্পূর্ণ বিপরীত। এদের শরীরের মাথার অংশ কালো এবং বাকি সম্পন্ন শরীর সাদা। এরা দৈর্ঘ্য ১.৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে এবং ওজনের ৩০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা সমুদ্রের মধ্যে শূন্যে লাফিয়ে উঠে পানিতে ডুব দিয়ে চলাচল করতে পছন্দ করেন। বিভিন্ন সার্কাসে অনুষ্ঠানে এরা নির্দেশনা অনুযায়ী অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী করে থাকে।এরা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় এবং বেশি পরিশ্রমী। সুন্দর ডলফিন এর কীর্তিকলাপ দেখতে কার না ভাল লাগে।
চিলিয়ান ডলফিনঃ
চিলির সমুদ্র উপকূলে এদের সহজেই দেখতে পাওয়া যায়। অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। দৈর্ঘ্যের দিক থেকে এরা ১.৭ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের শরীরের উপরের অংশ বেশিভাগই কাল এবং নিচের দিকের অংশ সাদা।অন্য ডলফিনদের থেকে এরা একটু ভিন্ন প্রকৃতির। সহজে মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করেনা। মানুষ তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখলেই তারা নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রাখে এবং সমুদ্রে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
তিমি মাছ এর মত ডলফিন মাছের শরীরে স্কিন খুবই মসৃন। বিভিন্ন ওয়াটার পার্কে যখন এদের খেলা দেখায় তখন এদের মানুষ কাছ থেকে টাচ করতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সুইমিংপুলে এদের সাথে মানুষকে বল খেলতেও দেখতে পাওয়া যায়। এই ট্রেণ্ড বিদেশে Water Park অথবা Amusement Park এ দেখতে পাওয়া যায়।
টুকুক্সি সুন্দর ডলফিনঃ
এরা মিঠাপানির ডলফিন। অ্যামাজনের বেসিন নামক আমাজন নদীতে এদের খুঁজে পাওয়া যায় এরা দেখতে অনেকটা বটলস ডলফিন এর মতই কিন্তু আকৃতিতে ছোট। এরা দৈর্ঘ্য.১.৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।এদের শরীরের রং নীলাভ, ধূসর, এবং কালশিটে বাদামী হয়ে থাকে। তবে এদের শরীরের নিচের অংশ কিছুটা গোলাপি বর্নের। এরা অনেকটা লাজুক প্রকৃতির প্রাণী। কখনো কখনো খাবারের খোঁজে উপকূলের কাছেও চলে আসে। এরা নিজেদের তাদের নিজস্ব কাজে ব্যস্ত রাখে। অন্য যে কোন প্রজাতির ডলফিন শূন্যে লাফিয়ে উঠে পানিতে ডুব দিয়ে সাঁতার কাটলে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগে। মনে হয় চোখ জুড়িয়ে যায়।
ডলফিন সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন
স্পিনার ডলফিনঃ
ছোট প্রজাতির সুন্দর ডলফিন এর মধ্যে এরা উল্লেখযোগ্য। এরা গ্রীষ্মমন্ডলীয় উপকূলীয় অঞ্চলের সমুদ্রের পানিতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এরা সমুদ্রের মাঝে অঞ্চলে থাকলেও মাঝে মাঝে খাবারের খোঁজে জনমানবহীন উপকূলের নিকটে আসে। এর আগে সর্বোচ্চ ২.৫ মিটার এর কাছাকাছি হয় এবং ওজনের দিক থেকে সর্বোচ্চ 0.৮০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।এরা দলবেঁধে চলাফেরা করতে পছন্দ করে। দরকার দল বেঁধে দলবেঁধে এক মাইগ্রেট করে। তবে এরা বিভিন্ন রকম অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শন করতে পছন্দ করে।
পরিশেষে, আরো বিভিন্ন প্রজাতির ডলফিন মাছ রয়েছে। ছোট কিংবা বড় যেই হোক না কেন প্রত্যেকেরই নিজস্ব কোন বৈশিষ্ট্য আছে যা মানুষের ভালো লাগে অথবা কোন কোন প্রজাতির মানুষ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পছন্দ করে। মানুষের নিকটে থাকে কিংবা দূরে যেখানে সুন্দর ডলফিন অনেক নিরীহ প্রকৃতির প্রাণী এবং তাদের কার্যকলাপ যে কোন মানুষের পছন্দনীয়। প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় ডলফিন মাছ বড় হয় তবে তা তিমি মাছ এর মত নয়।
এজন্য টাইটেলটি শিশু অবস্থায় বা বাচ্চা অবস্থার প্রজাতির ডলফিনদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই বাচ্চা ডলফিন গুলো বা শুশক মাছ গুলো প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় আকারে বড় হয়। আপনারা আপনাদের কমেন্ট বক্স এর মাধ্যমে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। সামুদ্রিক মাছ কিংবা প্রাণী যাই হোক না কেন আমরা বিচিত্র রকমের তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরব।