সম্পুর্ন পৃথিবীর ৭০% ই জল দ্বারা বেষ্টিত। আমরা বিভিন্ন জায়গায় যে জলই দেখি না কেন তার সর্বশেষ গন্তব্য সমুদ্র। তাই শতকরা ৭০ ভাগ জলের ৯৬.৫ ভাগ জলই সমুদ্রে এসে পতিত হয়। সেজন্য সমুদ্রে হাজার হাজার প্রজাতির মাছ এবং সামুদ্রিক জীবিত প্রাণী রয়েছে ; এ কথা বলার উপেক্ষা রাখে না। এজন্য জলই সকল প্রাণীর জীবনের আধার। সুন্দর মাছ গুলোর বিভিন্ন আকার-আকৃতি এবং রঙের কারনে সমুদ্রের নিচের জীবন অনেক বৈচিত্রময়। চোখ জুরানো মান্দারিন মাছ হতে সম্পূর্ন কার্টুনের মত দেখতে পিকাসো ট্রিগার ফিশ পর্যন্ত অন্য সকল ধরনের মাছই তাদের অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য সর্বদা পরিচিত। নিচে মাছ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলঃ
অ্যাকুরিয়ামে কী ধরনের চিংড়ি মাছ রাখতে পারবেন জানতে ভিজিট করুন
মান্দারিন ফিশঃ
সমুদ্রের মধ্যে এরা সবচেয়ে আকর্ষনিয় দেখতে। এরা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাস করে। এর সম্পুর্ন শরীর ছোট ছোট কাঁটা দ্বারা আবৃত। কাঁটাগুলো বিষাক্ত হওয়ায় কেউ যদি এদের ধরতে চায় তাহলে তার শরীরের মধ্যে বিষ প্রবেশ করে দেয়। সম্পুর্ন বিশ্বে এদের মাত্র দুইটি প্রজাতি আছে যারা নিজে থেকে রঙ পরিবর্তন করে থাকে। অন্য প্রাণীদের সবুজ রঙের কনিকা থাকলেও এদের শরীরে বর্নহীন কনিকা রয়েছে কিন্তু আলো শরীরে আলো পড়ায় এদের দেখতে সবুজ লাগে।
জুভেনাইল অ্যাঞ্জেল ফিসঃ
প্রাপ্ত বয়স্ক জুভেনাইল মাছ দেখতে অনেক আকর্ষনীয় লাগে। কালো শরীরের উপর নীল আলোর বাকা রেখার টান এ মাছকে অনিন্দ্য সুন্দর করে গড়ে তুলেছে। ছোট থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত এরা সম্পূর্ন রুপে পরিবর্তন হওয়ায় ১৯৩৩ সালের পূর্বে এদের ভিন্ন প্রজাতির মাছ হিসাবে ধরে নেওয়া হত। প্রাপ্ত বয়স্কদের শরীরে হলুদ এবং নীল রঙের সংমিশ্রিত রেখা থাকে।
ক্লাউন ট্রিগার ফিশঃ
এদের দেখে অতি সহজেই চেনা যায়। এদের শরীরের নিচের অংশে বড় বড় সাদা স্পট এবং উপরের কালো অংশে হলুদ রঙের ছোট ছোট স্পট রয়েছে। এদের মুখের সামনের দিকে সাদা দাগ রয়েছে এবং মুখের চোয়াল হলুদ রঙের। জুভেনাইল ফিশের মত প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় এরা আক্রমনাত্মক হয়ে উঠে। অ্যাকুরিয়ামে এদের বড় আকৃতির মাছের সাথে রাখা যাবে। তবে এদের জন্য বড় আকৃতির ট্যাংক ব্যবহার করতে হবে যাতে এরা ভালভাবে সাঁতার কাটতে পারে।
অ্যাকুরিয়ামে কোন মাছ না রখলেই চলবে না জানতে ক্লিক করুন
রিগ্যাল ট্যাং ফিশঃ
এ মাছের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। “Finding Nemo” সিনেমায় এ মাছ অত্যাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। “Dory” সিনেমার অ্যাঁনিমেটেড ভার্সনে এ মাছ কমন সার্জন নামে পরিচিত। এদের উজ্জ্বল নিল রঙের ডিম্বাকৃতির শরীর রয়েছে।
এদের লেজ হলুদ রঙের হয়ে থাকে। এ কালার কম্বিনেশন মাছটিকে অনেক সুন্দর রূপ দিয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে এদের জুভনাইল মাছের মত শরীরের রং পরিবর্তন হয়। অনেকটা ধূসর রঙের।
ফ্রেঞ্চ অ্যাঞ্জেল ফিশঃ
বাহামা, ফ্লোরিডা, ক্যারিবীয় অঞ্চলের অন্তরীপের অগভীর পানিতে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এটা জুভেনাইল মাছ হতে দেখতে অনেকটা ভিন্ন প্রকৃতির এবং এর শরীরে আড়াআড়ি ভাবে দাগ রয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে এদের শরীরের রং ধূসর বা কালো বর্নের হয়ে যায় এবং ছোট পাখনা হলুদ রঙের হয়। সমুদ্রে এদের সবসময় এদের সঙ্গীর সাথে জোড়া অবস্থায় দেখা যায়। অ্যাকুরিয়ামে এ মাছের জন্য একটি ট্যাংকে একটি মাছ রাখা যাবে।
সামুদ্রিক বিপন্ন প্রাণী সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন
লায়ন ফিশঃ
এরা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাস করে।এরা ড্রাগন ফিশ , স্কোরপিয়ান ফিশ, টাইগার ফিশ নামেও পরিচিত। উত্তর আমেরিকাতে এগুলা অত্যান্ত আক্রমণাত্মক হিসাবে বিবেচিত হয়। এদের প্রাকৃতিক কোন শিকারী নেই।
এরা নিজেরাই দেশীয় প্রজাতিদের নির্মূল করে। তবে এদের উৎপাদনশীলতা অনেক বেশি। এরা প্রতি ৭ দিনে ৩০০০০ ডিম পারে এবং নতুন কোন পরিবেশ এরা নিজেদের সাথে সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
পিকাসো ট্রিগারফিশঃ
এরা সুন্দর মাছগুলোর মধ্যে একটি। এদের অনেকে “হুমুহুমু ট্রিগারফিশ” নামেও ডেকে থাকে। এ মাছকে দেখতে অনেকটা কার্টুনের মত লাগে। এর মাছের ত্বকের রং হালকা প্রকৃতির কিন্তু কালো এবং নীল রঙের দাগ এর জন্য দেখতে অনেকটা পেইন্টিং এর মত লাগে। এদের ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। অ্যাকুরিয়ামে রাখলে এরা এদের মালিককে সহজে চিনতে পারে।
ক্লাউনফিশঃ
এরা দেখতে অনেক কিউট। “Finding Nemo” ছবিতে এটি সবচেয়ে জনপ্রিয়তা বেশি লাভ করেছে। মানুষ একে “Nemo” নামেই চিনে। এরা দক্ষিন-পূর্ব এশীয় উপকূলে এবং অস্ট্রেলিয়ার উপকুলে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এরা আত্মরক্ষার জন্য নিজেদের শরীর থেকে এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরন করে থাকে। এরা পুরুষ প্রজাতি হয়ে জন্ম নিলেও তাদের স্ত্রী প্রজাতিতে রুপান্তরিত হওয়ার ক্ষমতা আছে। কিন্তু একবার যদি স্ত্রী প্রজাতিতে রুপান্তরিত হয়ে যায় তাহলে পুনারায় এরা পুরুষ রুপে আর ফিরতে পারে না।
ফ্লেম অ্যাঞ্জেলফিশঃ
ডুবুরিদের কাছে বামন আকৃতির অ্যাঞ্জেলফিস অনেক পছন্দের এবং জনপ্রিয়। এর শরীর লাল রঙের এবং কালো বর্নের ডোরা দাগ আছে। তবে এদের পায়ু পাখনা নীল রঙের হয়। সবকিছুর সমন্বয়ে অসম্ভব সুন্দর মাছ এটি। এদের হাওয়াই দ্বীপ ছাড়াও ইন্দো-প্যাসিফক অঞ্চলে এদের দেখতে পাওয়া যায়। তবে এদের অনেক সময় হলুদ এবং লাল এর সংমিশ্রিত রঙের প্রজাতিও দেখতে পাওয়া যায়।
মুরিশ ইদোল ফিশঃ
এরা অন্তরীপ এবং কোরাল এর পোষ্টার এর মত কাজ করে। এদের যে কোন সামুদ্রিক আন্ডার ওয়াটার ফটোগ্রাফারের পোর্টফোলিওতে পাওয়া যায়। এদের শরীরের মাঝখানে অনেকটা চওড়া প্রকৃতির এবং সাদা-কালোর লম্বা ভাবে দাগ থাকে। তাদের শরীরের সামনে থেকে পেছন পর্যন্ত ডিমের কুসুমের মত উজ্জ্বল হলুদ বর্নের স্পট রয়েছে। এ বিষয়টিই এ মাছকে অনিন্দ্য সুন্দর রূপ দিয়েছে। উল্লেখ্য যে এদের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।
সামুদ্রিক প্রাণী সম্পর্কে জানার শেষ নেই। তাই এদের সম্পর্কে গতানুগতিক ভাবে জানতে ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের সাথেই থাকুন। আপনাদের কোন নতুন তথ্য জানা থাকলে কমেন্ট বক্সে তা জানতে ভুলবেন না কিন্তু। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।