সমুদ্রের বিশাল জলরাশিতে জানা অজানা অনেক প্রাণী বাস করে। অনেক প্রাণী আছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা জানি। এখনও অজানা এবং অনাবিষ্কৃত অনেক প্রাণী এখনও সমুদ্রের তলদেশে বিদ্যমান। জেলিফিশকে সমুদ্রের সৌন্দর্য বলা হয়। কিন্তু সুন্দর জিনিষ অনেক সময় বিপদের লক্ষন হতে পারে। তেমনি এক প্রাণী হল জেলিফিশ । জেলিফিশের মস্তিষ্ক, হৃদপিন্ড এবং চোখ এর মত গুরুত্বপূর্ন অনেক অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গ নেই। এ ধরনের তথ্য যে কোন প্রাণীর সম্পর্কে অবিশ্বাস্য। কিন্তু বিষয়টি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। এরা ৫০০ মিলিয়ন বছর পুরানো প্রাণী। আজকে জেলিফিশ এবং তার পূর্ববর্তী বংশধরদের সম্পর্কে বিভিন্ন আশ্চর্যজনক তথ্য নিচে দেওয়া হলঃ
মানুষকে মেরে ফেলাঃ
জেলিফিশ দেখে অনেক নিরীহ প্রকৃতির মনে হয়। হাত দিয়ে ধরতে মন চায়। কিন্তু “বক্স জেলিফিশ” নামের প্রজাতিটি বিশ্বের সামুদ্রিক প্রাণীর মধ্যে এদের সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত। এদের সম্পূর্ন শরীর ঘনক আকৃতির অনেকটা রুবিক্স কিউবের মত। এদের অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়। এদের স্ট্রিং বিষে ভরা থাকে যা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে প্রানঘাতি হয়। কখনও কেউ যদি এদের স্ট্রিং এর সংস্পর্শে আসে তাহলে কয়েক মিনিটের মধ্যে মৃত্যু ঘটে। কারন বিষ সরাসরি হৃদক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।।
এরা পানির মতঃ
মানুষের শরীরে শতকরা ৬০ ভাগ জল থাকে।কিন্তু এদের ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম হয়।এদের ক্ষেত্রে দেখা যায় সম্পূর্ন শরীরের প্রোটিন এবং স্নায়ুতন্ত্র মাত্র শতকরা ৫ ভাগ জায়গা দখল করে থাকে। বাকি ৯৫ ভাগই পানি থাকে এদের শরীরে।
মহাকাশে জেলিফিসঃ
১৯৯১ সালে জেলিফিশ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য একটি বিশেষ কাঁচের চেম্বারে করে প্রায় ২০০০ টি জেলিফশ মহাকাশে পাঠানো হয়। বিজ্ঞানীরা এটা দেখতে চেয়ে ছিল প্রাণীগুলো বাঁচে কিনা? কিন্তু মহাকাশে গ্রাভিটি না থাকার পরও জেলিফশগুলো ৬০০০০ টি তে পরিনত হয়েছিল। তারা এখনও মহাকাশে আছে। কিন্তু সেগুলো যদি পৃথিবীতে আসে তবে আবহওয়া এর জন্য বাঁচতে পারবে না।
জলবিয়োগের রহস্যঃ
আগে এক ধরনের কুপ্রথা ছিল যে, কেউ যদি জেলিফিশের স্ট্রিং এর দ্বারা আক্রমন হয়ে থাকে তাহলে যে স্থানে ঐ কাটাগুলো শরীরে প্রবেশ করিয়েছে সেই স্থানে জলবিয়োগ করলে ব্যাথা অনেকটা কমে যায়। কিন্তু হস্যকর হলেও ইহা সম্পূর্ন মিথ্যা। কখনো জেলিফিসের দ্বারা আক্রমনের শিকার হলে ঐ কাটাগুলো সাবধানে বের করে ফেলতে হবে; এবং সেখানে কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে দিয়ে রাখতে হবে। এতে ব্যাথা অনেকটা কমবে। যদি জ্ঞান হারানোর মত অবস্থা হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সামুদ্রকি বিপদজ্জনক প্রাণী সম্পর্কে ক্লিক করুন
এরা আসলে মাছ নয়ঃ
এদের নামের মধ্যে ফিশ থাকলেও এরা আসলে মাছ নয়। মাছের মেরুদন্ড থাকে এবং ফুলকার সাহায্যে শ্বাসক্রিয়া চালায়। কিন্তু জেলিফিশ অমেরুদন্ডী প্রাণী এবং এরা এদের শরীরের শতকরা ৯৫ পানি হতে অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকে।
নামের ভিন্নতাঃ
কখনও অনেকগুলো প্রাণীকে একসাথে দেখলে আমরা এক নামে ডাকে থাকি। যেমনঃ গরুর পাল। কিন্তু জেলিফিশ যখন একসাথে অনেক গুলো সমুদ্রের নিচে চলাচল করে তখন এদের বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। এদের গ্রুপকে “ব্লুম” “সোয়ার্ম” “স্ম্যাক” ইত্যাদি নামে ডাকা হয় ইংরেজিতে।
অমর জেলিফিশঃ
এক প্রজাতির জেলিফিস আছে যে গুলো সহজে মরে না। বরং এরা নিজেদের রুপান্তর করতে পারে। তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হলে একসময় পুনারায় বাচ্চা জেলিফিসে রুপান্তর হয়। এভাবে জেলিফিসের এ প্রজাতিটি যুগের পর যুগ বেঁচে থাকে।
সবচেয়ে প্রাচীন প্রাণীঃ
এদের হাড় এবং মাংস না থাকায় মিলিয়ন মিলিয়ন বছরপূর্বের জেলিফিস এর জীবাশ্ম বা ফসিল সহজে খুজে পাওয়া যায় না। তবে ২০০৭ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের “উটাহ” স্টেটের ৫০৫ মিলিয়ন বছর পূর্বের জেলিফিসের জীবাশ্মা খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।
সামুদ্রিক খাদ্যঃ
এরা ছোট ছোট গাছ, চিংড়ি এবং বিভিন্ন ধরনের মাছ খেয়ে থাকে। তবে খাওয়ার পূর্বে এরা এদের কাঁটা শিকারের শরীরে প্রবেশ করিয়ে তাদের মেরে ফেলে এবং খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে থাকে।
বায়োলুমিনোসেন্সঃ
এটি প্রাণীদের ক্ষেত্রে এক ধরনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এর মাধ্যমে প্রাণীরা নিজেরাই নিজেদের শরীর থেকে আলো উৎপন্ন করে থাকে। কিছু কিছু প্রজাতির জেলিফিশ রয়েছে যারা নিজেরাই নিজেদের শরীর থেকে আলো উৎপন্ন করে থাকে। এই ঘটনাকে বায়োলুমিনোসেন্স বলে। এতে এদের সৌন্দর্য দ্বিগুন বৃদ্ধি পায়।
পরিশেষে, সমুদ্রের অতল গহ্বরে প্রানীদের অভাব নেই। এখনো অনেক প্রজাতি আছে যারা আবিষ্কৃত হয়নি। সামুদ্রিক প্রানী সম্পর্কে আরও জানতে আমাদের সাথেই থাকুন এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পেজের মাধ্যমে আপনাদের মন্তব্য আমাদের সাথে শেয়ার করুন।