আপনি সামুদ্রিক বিপদজ্জনক প্রানী এর কথা চিন্তা করলে বিভিন্ন শিকারী প্রানী এর নাম মাথায় আসে। সে তালিকার শীর্ষে হাঙর অবস্থান করলে অবাক হওয়ার মত কিছু নেই। প্রকৃতপক্ষে হাঙর এমন খ্যাতি পেয়েছে সুযোগ পেলেই সন্দেহাতীত ভাবে ডুবুরিদের মেরে ফেলার জন্য।কিন্তু আপনি কি জানেন হাঙর চেয়ে সামুদ্রিক জলহস্তি অনেক বিপদজনক।একটি সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যায়, ২০১৫ সালের দিকে ডুবুরিদের উপর হাঙর এর আক্রমন শূন্যে নেমে এসেছে।সুতরাং আমরা হাঙরকে ডুবুরিদের মৃত্যুর কারন বলতে পারি না। আসলে ডুবুরিদের মৃত্যুহার বৃদ্ধি কিছু অভ্যন্তরীন বিষয়ের উপর নির্ভরশী্ল। এর মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি এবং মানষিক চাপ বাহিরের আক্রমন থেকেও বেশি প্রভাব ফেলে ডুবুরিদের উপর।
সামুদ্রিক বিপদজ্জনক প্রাণী সম্পর্কে উল্লেখ করা হল
লায়ন ফিস (Lion Fish):
এ মাছের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করে দিলেও তা আপনাকে বোকা বানাতে পারে। কথিত আছে, এদের শরীরে কাটা আছে যেটি আপনাকে মেরে ফেলবে না। কিন্তু কাঁটাতে এত বেশি পরিমান বিষ আছে যে মৃত্যুর সম পরিমান কষ্ট আপনাকে অনুভূত করাবে। ডুবুরিদে জন্য সুখবর হইলো এরা এদের কাঁটা শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করে। তারা কখনই শত্রুকে আক্রমন করার জন্য লুকিয়ে থাকে না। ক্যারাবীয় এবং পূর্ব-আটলান্টিক মহাসাগরে এদের দেখা পাওয়া যায়।
শঙ্কু শামুক (Cone Snail):
সামুদ্রিক বিপদজ্জনক প্রানী সৃষ্টির মধ্যে ৯ নম্বরে শামুক রয়েছে। এটি সামুদ্রিক এবং শঙ্কু আকৃতির হয়ে থাকে। এরা লম্বায় ১০-১৫ সে.মি. এবং অনেকটা নিরীহ প্রকৃতির হয়ে থাকে। কিন্তু এদের শরীর থেকে নির্গত এক ফোঁটা বিষ ২০ জন মানুষের মৃত্যুর কারন হতে পারে। এরা তাদের ফাকা দাঁত দিয়ে শত্রুর শরীরে বিষ প্রবেশ করায়ে থাকে। এরা ভারত এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গভীর সমুদ্র অঞ্চলে পাওয়া যায়। এদের “সিগারেট শামুক” ও বলা হয়ে থাকে।
স্ট্রিংরে (Stringrays):
এটি কুমিরদের শিকার করে থাকে। এরা সাধারণত মানুষ এবং ডুবুরিদের সহজে আক্রমন করে না । তবে কোন কারনে যদি কারও পা এদের উপরে পরে তবে এরা নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য স্ট্রিং ব্যবহার করে থাকে। এদের বিষ অত্যান্ত কষ্টদায়ক এবং মানুষের মৃত্যুর কারন হয়। এজন্য সমুদ্রের তলদেশে চলচল করার সময় অবশ্যই ডুবুরিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ব্যারাকুডা (Barracuda):
অনেকে ধারালো দাঁতযুক্ত দুই মিটার লম্বা ব্যারাকুডা নামে ভৌতিক গল্প শুনে থাকি যে এরা সচরাচর সন্দেহাতীত লোকদের আক্রমণ করে থাকে। অনেকের ধারনা হয় যে উড়ন্ত মাছ হয়ত মানুষকে আক্রমন করে। কিন্তু বাস্তবে তা সত্য নয়। উড়ন্ত মাছ এবং ব্যারাকুডা সম্পূর্ণ আলাদা এবং এ আক্রমন ব্যারাকুডা করে থাকে। তবে এদের শরীর টর্পেডো মিসাইল এর মত। এ কারনে পানির মধ্যে গতি অনেক বেশি। এদের শরীরের বিষাক্ত পদার্থ থাকে। কেউ যদি এ প্রাণী খেয়ে থাকে তাহলে তার বমি বমি ভাব এবং পায়ে দুর্বল অনুভব করে। এসব লক্ষন তিন মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
ফ্লাওয়ার আর্চিন(Flower Urchin):
এদের কোন কারন ছাড়াই পৃথিবীর “সবচেয়ে বিপদজনক সামুদ্রিক আর্চিন” বলা হয় । এদের এ নাম গিনেস রেকর্ড বুকে তুলা হয়েছে। এটি দেখতে অনেকটা সুন্দর উজ্জ্বল কাঁটা বিশিষ্ট।কিন্তু এদের কাঁটা অত্যন্ত বিষাক্ত। এদের কাঁটা নরকের মত যন্ত্রনা না দিলেও ভুক্তভোগীকে প্যারালাইসিস অথবা মৃত্যু মুখে পতিত করে।
স্টোনফিস(Stonefish):
এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ নামে পরিচিত। আকৃতিতে বড় না হলেও হুমকির কারন হতে পারে তা এটিকে দেখলে বুঝা যায়। এরা আকৃতিতে ৩০-৪০ সে মি এর খুব বেশি বড় হয় না। এর বিষ তীব্র ব্যাথা, সাময়িক প্যারালাইসিস, হার্ট-ফেইলর এর কারন হতে পারে। এ বিষ তারা আক্রমন এর জন্য ব্যবহার না করলেও আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করে থাকে।
ইলেকট্রিক ইল(Electric Eel):
এদের শরীরে ৬০০০ ইলেকট্রোলাইট থাকে যা একটি ছোট আকারের ব্যাটারির বিদ্যুৎ স্টোরেজ করতে পারে। যখনই মানুষ বা অন্য প্রাণী এর নিকটে আসে তবে এর শরীর হতে বিদ্যুৎ বের হয় । এ বিদ্যুৎ এর কারনে প্রতিপক্ষের অনেক সময় মৃত্যু ঘটে।
ব্লু রিং অক্টোপাস(Blue Ringed Octopus):
এরা আকৃতিতে অনেক ছোট হলেও অনেক মারাত্মক। কারন এদের বিষ সায়ানাইড হতে ১২০০ গুন বেশি শক্তিশালি। এরা সহজে কারও সাথে ঝামেলায় জড়াতে চায় না। বরং এদের সামনে কেউ কখনও আসলে এরা বিষ ছেড়ে দিয়ে সুন্দরভাবে সরে যায়।এ বিষের কোন প্রতিষেধক নেই। সামুদ্রিক বিপদজ্জনক প্রানী গুলোর মধ্যে এরা কম বিষাক্ত নয়। এরা এক প্রকার কালি ছুড়ে দেয় যা বিষাক্ত হয়।
লোনা পানির কুমির(Saltwater Crocodile):
এরা ১২০০কেজি ওজনের হয়ে থাকে যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুমির। এদের বিশাল আকৃতি শক্তিশালি চোয়াল বাকি সব প্রাণী হতে আলাদা। এদের চোয়াল হাঙর এর থেকে ১০ গুণ বেশি শক্তিশালি। অন্য সব শিকারি প্রাণী থেকে এরা জলে এবং স্থলে খুব বেশী শক্তিশালি। মানুষের মত কুমির কেন কাঁদে তা জানার জন্য ভিজিট করুন
বক্স জেলিফিশ(Chironex):
এরা পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক প্রাণীর মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করে। এক বক্স বিষ ৬০ জন মানুষকে মারার জন্য যথেষ্ট। এরা কাউকে আক্রমন করলে বিষ এতটাই দ্রুত কার্যকরী হয় যে ৫ মিনিটের কম সময়ে শিকার হওয়া প্রানীর মৃত্যুর কারন হতে পারে। অন্য সব জেলিফিস বিদ্যুৎ সহ ভেসে বেড়ালেও এরা সাঁতার কাঁটতে পারে।