সার্বিয়ার প্রাণী সম্পর্কে জানার আগে সার্বিয়া সম্পর্কে জেনে নিই।সার্বিয়ার সরকারি নাম “রিপাবলিক অফ সার্বিয়া”। এ দেশটির চারপাশ ভূমি দ্বারা বেষ্টিত। অর্থাৎ এ দেশের শুধুমাত্র স্থলসীমা আছে কোন রকম জলসীমা নেই। এর রাজধানী বেলগ্রেড যা ঐ দেশের সবচেয়ে বড় শহর। এত সীমাবদ্ধতার সত্ত্বেও অসাধারন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সুন্দর সার্বিয়ার প্রানী এর উপস্থিতি বিশ্বের সকল মানুষের নজর কেড়েছে। প্রায় ৯০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৮১ প্রজাতির পাখি এবং ২০০০ প্রজাতির প্রজাপতির উৎপত্তিস্থল সার্বিয়া। এছাড়াও অগনিত সংখ্যক মাছ, পোকা-মাকড় সহ অন্যান্য প্রাণীর উপস্থিতি দেশটির প্রাণী বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করেছে। এমনই আশ্চার্জজনক প্রানীর সম্পর্কে তথ্য নিচে তুলে ধরা হল যা ঐ দেশের মানুষের এবং ভ্রমনকারীর সহজে চোখে পড়ে। নিচে স্থানীয় সকলের নিকট পরিচিত সার্বিয়ার প্রাণী গুলো সম্পর্কে তুলে ধরা হলঃ
বন্য শুকরঃ
আমেরিকায় একটি ফুটবল টিমের নাম ইংরেজিতে শুকরের নামে রাখা হয়েছে। তারা শুকরের মাংস খেতে পছন্দ করে, এ জন্য এ নাম রাখে নি। সার্বিয়ায় মাংশাসী শুকর গুলো মুষুলধারে বৃষ্টির সময় আবাধ ভাবে চলাফেরা করে। এজন্য এদের বেলগ্রেডের আশ্চর্যজনক প্রানীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরা সংখ্যায় খুব বেশি না বরং অনেক স্থিতিশীল। এরা জনপ্রিয় হলেও এদের মানুষের ক্ষতি করার প্রবনতা অনেক কম। সার্বিয়ার প্রাণী শুকর এবং আমাদের দেশের শুকর এর মধ্যে সাইজের দিক থেকে পার্থক্য আছে।
ধূসর নেকড়েঃ
ইউরোপের শিকারী প্রাণীদের মধ্যে ধূসর নেকড়ে অন্যতম। সার্বিয়াতে ৫০০ এরও বেশি প্রজাতি থাকায় এদের সহজে চোখে পড়ে। এরা চলাফেরার সময় কোন ধরনের সুরক্ষা বহন করে না। কোন সময় আপনি যদি এদের মুখোমুখি হন তাহলে বুঝতে হবে আপনির উল্টা সময় গননা শুরু হয়েছে। এদের বেশি ভাগ সার্বিয়ার দক্ষিন-পশ্চিম এবং পূর্বাংশে দেখা যায়। সাইবেরিয়ার প্রাণী সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন
বাদামী ভাল্লুকঃ
সার্বিয়া বাদামি প্রজাতির ভাল্লুকের উৎপত্তিস্থল। এজন্য দেশটিতে বাদামি রঙের সীমিত সংখ্যক ভাল্লুক রয়েছে।সংখ্যায় কম হওয়ার বিষয়টি তাদের কাছে অনেকটা অপ্রীতিকর। ঐ দেশের “তারা ন্যাশনাল পার্ক” এ সর্বোচ্চ ২৫০ কেজি পর্যন্ত ভাল্লুক দেখতে পাওয়া যায়। সংখ্যায় কম হলেও দেখতে সুন্দর প্রকৃতির।
বলাকান ক্যামিওসঃ
এরা এ গ্রহের সবচেয়ে সুন্দর প্রাণীর মধ্যে একটি। এরা মূলত উন্নত জাতের হাইব্রিড ছাগল এবং এদের ইউরোপের পাহাড়ি অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। এদের শিং সাধারন প্রজাতির ছাগলের চেয়েও বড় হয়। কিন্তু সার্বিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত না হওয়াই এদের সরকারি ভাবে সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা নেই। এজন্য এরা প্রায়ই শিকার হয়, যা এদের বিলুপ্তির লক্ষন। সার্বিয়ার প্রাণী বলাকান এবং আমাদের দেশের ছাগলের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে।
মার্বেল পোলক্যাটঃ
নাম পড়ে এদের বিড়াল মনে হলেও এরা আসলে বিড়াল নয়। ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় এদের অনায়সে খুঁজে পাওয়া যায়। এদের যে কেউ ময়লা আবর্জনার মধ্যে খুঁজে পাবে। তবে এদের দৃষ্টিশক্তি অনেক প্রখর এবং ঘ্রানের ক্ষমতা অনেক বেশি। সার্বিয়ার প্রাণী পোলক্যাট এবং আমাদের দেশি বিড়ালের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।
লাল হরিনঃ
এরা সবচেয়ে বিতর্কের প্রাণীদের মধ্যে একটি। কেননা এদের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং সুন্দর হরিন বলে বিবেচিত করা হয়। এদের সার্বিয়া এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে পাওয়া যায়। সার্বিয়ায় সর্বত্র দেখতে পাওয়া প্রাণীদের মধ্যে এরা একটি । বর্তমানে এদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হরিন সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন
লাল শিয়ালঃ
এরা ইউরোপের সবচেয়ে পরিচিত স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে একটি। এরা প্রতিকূল পরিবেশে সহজে এদের মানিয়ে নিতে পারে। মাঝরাতে শীতের মধ্যে এদের দলবদ্ধ ভাবে দেখতে পাওয়া যায়। এ দৃশ্য দেখে বেলগ্রেড সহ অন্যান্য শহরের লোকজন চমকে উঠেছিল। আমাদের দেশের শিয়াল এর চেয়ে সার্বিয়ার প্রাণী লাল শিয়াল দেখতে সুন্দর এবং আকর্ষনীয়।
প্রজাপতিঃ
সার্বিয়া প্রজাপতি এবং মথ নামের প্রাণীর উৎপত্তিস্থল। এদেশে প্রায় ২০০০ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। প্রজাপতিগুলো অন্য দেশের প্রজাপতির চেয়ে আলাদা এবং খুবই সুন্দর। এদের দৈহিক গঠন এবং বর্নে ভিন্নতা রয়েছে। সার্বিয়াতে এর উপর ভিত্তি করে একটি সিনেমা নির্মিত হয়েছিল। সিনেমাটি সার্বিয়ার চলচিত্র জগতে সবচেয়ে ভীতিকর সিনেমা হিসাবে খ্যাতি পেয়েছিল।
পরিশেষে, সার্বিয়া প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং জলবায়ু মনোরম হওয়াই যে কেউ পছন্দ করে। একই সাথে সার্বিয়ার প্রাণী গুলোর বৈচিত্র্য ঐ দেশের প্রকৃতির সাথে অপরূপ সৌন্দর্যে মিশে গিয়াছে। তাই বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রাণী সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন এবং আপনাদের মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়া পেজের মাধ্যমে আমাদের সাথে শেয়ার করুন।