মুরগির আমাদের চারপাশে সর্বদা ঘুরে বেড়ানো একটি পাখি। আমাদের খাদ্য তালিকায় এরা বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মুরগি আমাদের বিভিন্ন উপায়ে পুষ্টি সরবারহ করে থাকে। ডিম, মুরগির মাংস, বিভিন্ন উপাদেয় খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। আমাদের দেশে সাধারনত দুই ধরনের মুরগি পাওয়া যায়। দেশি এবং ফার্মের মুরগি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। দেশি মুরগির ডিম ফার্মের মুরগির ডিমের চেয়ে ছোট হয়। বৃদ্ধ অবস্থায় অনেকেই দেশি মুরগির স্যুপ খেয়ে থাকে। এতে তারা শরীরের শক্তি পায়। এজন্য ডাক্তাররাও মুরগির স্যুপ খাওয়ার পরামর্শ দেয়। ডিম বেশি দেয় এমন সব মুরগি সম্পর্কে নিচে দেওয়া হলঃ
হোয়াইট লেগহর্নঃ
এরা ডিম সাদা রঙের এবং বড় আকারের হয়। উপযুক্ত পরিবেশে এরা ভাল ভাবে বেড়ে উঠে। এদের উপযুক্ত পরবেশের মধ্যে এদের খাদ্য, পানি এবং তাপমাত্রা নিশ্চিত করতে হয়। বছরে এরা বছরে ২৮০টি কিংবা তার বেশি ডিম পেড়ে থাকে। এরা ১৬-১৭ সপ্তাহ বয়স হতে ডিম পারা আরাম্ভ করে। এরা অল্পতেই ভয় পায় এবং উড়তে পারে। এরা ওজনে ২-২.৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
রোড আইল্যান্ডঃ
অন্য যেকোন মুরগি পালনের চেয়ে এদের পালন করা সহজ এবং খরচ কম হয়। এরা অন্য মুরগিদের থেকে আকারে ছোট হয় এবং বছরে এরা প্রায় ২৬০ টি ডিম দিয়ে থাকে। এরা বেশি তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে। ১৮-২৪ সপ্তাহ বয়স হতে এরা ডিম পাড়া শুরু করে। ওজনের দিক থেকে এরা প্রায় ৩ কেজির কাছাকাছি হয়ে থাকে। ফার্মের মুরগি মধ্যে রেড আইল্যান্ড অন্যতম।
রেড সেক্স লিংকঃ
অন্য মুরগিদের চেয়ে এরা ভদ্র প্রকৃতির এবং কম তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে পারে। এরা বছরে ২৫০ – ৩০০টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। এদের ডিমের রং বাদামি হয়ে থাকে। ফার্মের মুরগি কারও অত্যাধিক পছন্দের হলে সেটি তার খাদ্য তালিকায় শীর্ষে রাখবে।
বাসা-বাড়িতে মুরগি পালন করার জন্য উপযুক্ত মুরগি এটি। এরা ১৫ সপ্তাহ বয়স হতে ডিম দেওয়া শুরু করে। ওজনের দিক থেকে এরা ২.৫ -৩.৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
আমেরিকানাঃ
সুন্দর মুরগিদের তালিকায় এরা শীর্ষে অবস্থান করবে। এদের অনেকে “ইস্টার এগ চিকেন” নামেও পরিচিত। তবে এ মুরগি রঙিন ডিম পারে। এরা প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। ২৫-৩০ সপ্তাহ বয়স হতে এরা ডিম দেওয়া শুরু করে। ওজনে এরা ২ -২.৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বছরে এরা ২৫০টি ডিম দিয়ে থাকে।
প্লাইমাউথ রকঃ
এ প্রজাতির মুরগি অনেক শান্ত এবং নিরীহ প্রকৃতির। বাচ্চারা এদের সাথে খেলতে পছন্দ করে। এরা গায়ের রং ছাই এর মত। এদের ডিম হালকা বাদামি রঙের হয়ে থাকে। অন্য সব মুরগি থেকে এরা আকারে বড় হয়ে থাকে। এরা ১৮-২২ সপ্তাহ হতে এরা ডিম দেওয়া শুরু করে। বছরে এরা ২৮০ টি পর্যন্ত ডিম পেড়ে থাকে। ওজনে এরা প্রায় ৩ কেজির কাছাকাছি হয়।
ওয়াইনডটঃ
এরা অনেক শান্ত প্রকৃতির এবং দেখতে সুন্দর মুরগিদের মধ্যে পড়ে। এরা বছরে ২০০টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। এরা উন্নত জাতের মুরগি এবং পোল্ট্রি ব্যাবসার জন্য এ জাতের মুরগি পালন করা হয়। ১৮-২০ সপ্তাহ বয়স হতে এরা ডিম দেওয়া শুরু করে। এরা ওজনে ২.৫ কেজি এর থেকে বেশি হয়ে থাকে। ফার্মের মুরগির এর মধ্যে এটি বেশি জনপ্রিয়।
নিউ হ্যাম্পশায়ার রেডঃ
অন্য সব মুরগির মত এরা বেশি ডিম দিতে পারে না। তবে বছরে প্রায় ২০০ টি ডিমদিয়ে থাকে। এরা অন্য মুরগির চেয়ে আক্রমণাত্মক প্রকৃতির। ১৮-২১ সপ্তাহ বয়স হতে ডিম দেওয়া শুরু করে। ওজনে এরা ৩ কেজির কাছাকাছি হতে পারে।
বাফ অর্পিংটণঃ
এরা বছরে অনেক কম ডিম দিয়ে থাকে। তবে এরা অনেক শান্ত প্রাকৃতির এবং সহজেই এদের হ্যান্ডেল করা যায়। এরা ১৯ থেকে ২৪ সপ্তাহ বয়স হতে ডিম দেওয়া শুরু করে। ওজনের দিক থেকে এরা ২.৫ থেকে ৩.৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বছরে এরা ১৫০ থেকে ২০০ টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। এ ফার্মের মুরগিটি সব জায়গায় পাওয়া যায় না। সুন্দর পাখিদের সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন
অস্ট্রালর্পঃ
এরা মানুষের সাথে সবচেয়ে ফ্রেন্ডলি প্রকৃতির এবং কিমি. ব্যয় বহুল। মানুষ এ জাতের মুরগি পালন করতে এবং খেতে পছন্দ করে। এছাড়া এরা বেশি পরিমানে ডিম দিয়ে থাকে। ২২ -২৪ সপ্তাহ বয়স হতে এরা ডিম দেওয়া শুরু করে। ওজনে এরা ২.২৫ থেকে ৩.২৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বছরে এরা ২৫০ টি এর মত ডিম দিয়ে থাকে। এদের ফার্মের মুরগি এর মধ্যে ধরা হয় না। ফার্মের মুরগির চেয়ে দেশি মুরগি বেশি উপকার দেয় শরীরের।
স্পাকেল্ড সাসেক্সঃ
এরা সবচেয়ে ওজনে বেশি আকৃতির। ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহ বয়স হতে ডিম দেওয়া শুরু করে। বছরে এরা ২৫০ থেকে ৩০০ টি ডিম দিয়ে থাকে। ওজনে এরা ৩.২৫ থেকে ৩.৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা অনেক নিরীহ এবং উৎসুক প্রকৃতির। ফার্মের মুরগি দিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন উপাদেয় খাবার অনেকেই পছন্দ করে।
পরিশেষে, মুরগির অনেক প্রজাতি থাকলেও এগুলোও বেশি জনপ্রিয় এবং ব্যাবসার জন্য লাভজনক। উপরের মুরগি গুলো হতে কোন মুরগি আপনার পোল্ট্রি ব্যাবসার জন্য ভাল হবে তা সিলেক্ট করে সামনে এগুতে পারেন। এ সব প্রজাতি কম-বেশি সবাই পালন করে থাকে। পোল্ট্রি ব্যাবসার মাধ্যমে অনেক স্বাবলম্বী হচ্ছে। বিভিন্ন পশুপাখি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনার মন্তব্য আমাদের সাথে শেয়ার করুন।