পাখি সাধারনত আকাশে উড়ে বেড়ায়। কিন্তু সেই পাখি যদি পানিতে ভেসে বেড়ায় কিংবা মাটিতে হাটতে পারে তাহলে বিষয়টি শুনতেই অদ্ভুত লাগে। সবচেয়ে বড় হাঁস বেশি মাংস দেয়। হাঁসের মাংস সুস্বাদু হওয়াই সবাই খেতে পছন্দ করে। পাখিদের মাটিতে হাটা দেখা আমরা সচরাচরই অভ্যস্ত। কিন্তু পাখি পানিতে ভেসে বেড়ায় তা শুনতেই অবাক এবং বিষ্ময়কর। কিন্তু এমনটি আমাদের চারপাশে সারাক্ষনই হচ্ছে। হাঁস গৃহপালিত প্রানীদের মধ্যে একটি। গ্রামীন জীবনে হাঁসের পাশাপাশি মানুষ মুরগিও পালন করে থাকে। হাঁস-মুরগি পালন করে বর্তমানে অনেক মানুষই স্বাবলম্বী হচ্ছে।
গ্রামে হাঁস মুরগি পালন করে অনেকেই উদ্যোক্তা হচ্ছে। এতে করে পোল্ট্রি ফার্মের মাধ্যমে তারা তাদের নিজস্ব বিজনেস দাড় করাচ্ছে। তবে এ তো গেল দেশি হাঁস মুরগির কথা। তবে বর্তমানে মিঠা পানি এবং লবনাক্ত পানিতে দুই ধরনের হাঁস দেখতে পাওয়া যায়। এজন্য এদের ফ্রেশ ওয়াটার এবং সী ওয়াটার
হাঁস বলা হয়। এদের পৃথিবীর সব উপ-মহাদেশে এবং মহাদেশে দেখতে পাওয়া যায়। শুধুমাত্র এন্টার্কটিকা মহাদেশে এদের শুধুমাত্র দেখতে পাওয়া যায় না। তবে এরা খাবারের জন্য পানির নিচে ডাইভ দিয়ে থাকে। দেশি হাঁসের মতই এরা দেখতে কিন্তু দেশ আলাদা হওয়াই কিছু বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য থাকে।
রাজহাস কিংবা পাতি হাঁস যেটিই হোক না কেন এরা অতি সহজেই পাখিদের ধোকা দিয়ে থাকে। কোন পাখি যদি এদের আক্রমন করা কিংবা ধরতে চায় তখনই এরা পানির নিচে টুপ করে ডুব দিয়ে থাকে। দীর্ঘ সময় পানির নিচে ডুব দিয়ে থাকতে পারে। পানির কারনে যে কোন কিছু সহজেই ভিজে যায়। এমনকি মানুষের শরীরও গোসলের সময় ভিজে যায়। কিন্তু হাঁস পানির মধ্যে থাক কিংবা ডুব দিক তবুও এদের শরীর সম্পূর্ন ভিজে না। বরং শুকনা থাকে। আজকে আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হাঁস সম্পর্কে জানব। এদের তালিকা শুধুমাত্র ওজনের ভিত্তিতে করা হয়েছে।
ক্রেস্টেড হাঁসঃ
গৃহপালিত হাঁস গুলোর মধ্যে এরা শীর্ষে অবস্থান করে। একই নামে এদের এক বন্য প্রজাতিও রয়েছে যা দক্ষিন আমেরিকার আশেপাশের অঞ্চলে দেখা মিলে। এরা ওজনে ৩ থেকে সোয়া ৩ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঐ অঞ্চলে এদের সহজেই পোষা প্রানী হিসাবে দেখা যায়। এরা বছরে গড়ে ১৩০ টি করে ডিম পাড়তে পারে। হাঁসের ডিম দেশি মুরগির ডিমের চেয়ে বড় হয় আকারের দিক থেকে।
স্যাক্সোনি হাঁসঃ
এই প্রজাতির হাঁস জার্মানিতে দেখতে পাওয়া যায়। ১৯৩০ সালের দিকে এদের প্রথম দেখতে পাওয়া যায়। পুরুষ প্রজাতির হাঁস গুলো ওজনের দিক থেকে ৩.৫ কেজির উপরে হয়ে থাকে। এরা ধূসর বর্নের হয়ে থাকে এবং ঘাড়ে রিং আকৃতির একটি চাকা দেখা যায়। স্ত্রী প্রজাতির হাঁস গুলো আকারে ছোট হয়ে থাকে। এদের দুই ধরনের উদ্দেশ্যেই পালন করা যায়। এরা ৮০ থেকে ১০০ টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। হাঁসের ডিম গুলো সাদা রঙের হয়ে থাকে।
গৃহপালিত প্রানীঃ
ক্যাগুয়া নামক হাঁস গুলো অন্যসব হাঁস থেকে আকারে এবং ওজনে বড় হয়ে থাকে। আনুমানিক ১৮৪০ সালে আমেরিকায় এদের দেখা পাওয়া যায়। এরা ওজনে ৩.৫ কেজির উপর পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা অনেক কালো এবং রঙ্গিন প্রকৃতির হয়ে থাকে। পা, ঠোঁট, মাথা সহ পালকগুলো কালো বর্নের হয়ে থাকে। বছরে এরা ১০০ থেকে ১৫০ ডিম দিয়ে থাকে। ডিম পাড়া শুরু হওয়ার সময় এদের শরীর সম্পূর্ন কাল থাকে। ডিম পাড়া শেষের দিকে আসতে থাকলে এদের শরীর কিছুটা উজ্জ্বল বর্নের হয়ে যায়।
সুইডিশ হাঁসঃ
এই হাঁস গুলো সুডেনে দেখতে পাওয়া যায়। এরা ওজনের দিক থেকে প্রায় ৪ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা ধূসর অথবা ছাইয়া কালারের হয়ে থাকে। এরা স্ত্রী প্রজাতির হাঁস গুলো থেকে পুরুষ প্রজাতির হাঁস গুলো দেখতে বড় হয়। ১০০ থেকে ১৫০ টি ডিম বছরে দিয়ে থাকে এবং এদের ডিমের উপর সামান্য ধূসর আভা রয়েছে। তবে এদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সুইডেন এবং আয়ারল্যান্ডে এদের দেখা মিলে।
সবচেয়ে বড় হাঁসঃ
এদের নাম পেকিন হাঁস। এদের দুটি দেশে দেখতে পাওয়া যায়। জার্মান এবং আমেরিকায় এরা একই নামে পরিচিত। উভয় দেশেরই হাসের বৈশিষ্ট্য সেম হয়। কেননা এদের পালন করাই হয় মাংসের জন্য। ওজনের দিক থেকে এরা ৪.৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে জার্মান হাঁসের মধ্যে সামান্য হলুদের ভাব রয়েছে। মাংস অনেক বেশি হওয়াই এদের সুঠামো দেহ দেখতে অনেক আকর্ষনীয় লাগে। ঘাড় অনেক মাংসল এবং ডিম বেশি দেওয়ার জন্যও এরা সব জায়গায় বেশি পরিচিতি।
মুরগি পালন সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন
পরিশেষে, হাঁস শুধু আমাদের দেশেই কিংবা এশীয় মহাদেশেই পাওয়া যায় না। বরং সারা বিশ্বে এদের জনপ্রিয়তা আছে। সব জায়গাতেই এদের গৃহপালিত প্রানী হিসেবে পালন করা হয়। বর্তমানে হাঁসের খামার করে অনেকেই লাভবান হচ্ছে, স্বাবলম্বী হচ্ছে। এজন্য ক্ষুদ্র ঋন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে অনেকেই।
হাঁস সহ অন্যান্য পশুপাখিদের সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন এবং আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন। হাস দিয়ে পিকনিক খাওয়া যথেষ্ট মজার হয়। কেননা হাঁসের মাংস সুস্বাদু প্রকৃতির হয়।