আমরা সবাই বিচ্ছু নামক প্রানীর সাথে পরিচিত। বিভিন্ন প্রজাতির বিচ্ছু রয়েছে এ পৃথিবীতে। এদের মধ্যে কিছু বিচ্ছু বিষহীন এবং কিছু বিচ্ছু বিষধর। আমরা আজকে বিষধর বিচ্ছু সম্পর্কে জানব। পৃথিবীর বিষধর প্রজাতির বিচ্ছুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত বিচ্ছু হল Pandinus imperator প্রজাতির।
এরা আফ্রিকার উষ্ণ-আর্দ্র পরিবেশে বসবাস করে।পশ্চিম আফ্রিকার সাভানা অঞ্চলের রেইন ফরেস্টে পাওয়া যায়। এটি পৃথিবীর বড় বিচ্ছুদের মধ্যে একটি। এই প্রজাতির বিচ্ছুরা ৬-৮ বছর পর্যন্ত বেচে থাকে।প্রাপ্ত বয়স্করা আকৃতিতে ৬ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে।

দৈহিক গঠনঃ
বিচ্ছুদের দৈহিক গঠন অন্য সব প্রাণী থেকে আলাদা এবং আকৃতিতে এরা ছোট হয়ে থাকে। বিচ্ছুরা সাধারণত কালো বর্ণের হইলেও প্রজাতি ভেদে এদের বর্ণ বিভিন্ন রকম হইতে পারে। Pandinus imperator প্রজাতির বিচ্ছুরা কালো রঙের হয়ে থাকে।কিন্তু অন্য বিচ্ছুদের মত এরা যখন অতি-বেগুনি রশ্মি ( UV-light) এর নিচে যায় তখন এদের শরীর প্যাস্টেল সবুজ অথবা নীল বর্ণের দেখায় যা বিচ্ছুকে অনন্য সুন্দর দেখায়।অন্যান্য বিচ্ছুদের মত এরাও নিশাচর প্রাণী।রাতে শিকার করতে বের হয়।
কামড়ানোর পদ্ধতিঃ
সাধারনত বিচ্ছুরা খাবার সংগ্রহ এবং শত্রুকে দংশন এর জন্যএদের হুল ব্যবহার করে থাকে। বিচ্ছুদের শরীরের সবচেয়ে ভয়ংকর অঙ্গ হল এদের হুল। বিষাক্ত বিচ্ছুদের শরীরের সম্পূর্ণ বিষ এদের হুলে থাকে। হুল ব্যবহার করে বিচ্ছুরা এদের শিকার ধরে।এটি হুল ফুটালে মৌমাছির হুল ফুটানোর সম পরিমাণ ব্যাথা হয়।তরুন প্রজাতির বিচ্ছুদের হুল ফ্যাশান হিসাবে ব্যবহার করে কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্করা প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবহার করলেও এদের হুলে কোন বিষ থাকে না। এ জন্য এরা আকারে বড় হইলেও মানব জাতির জন্য বিপদজ্জনক বলে বিবেচিত হয় না।

পোষা প্রানীঃ
এ কারনে বিচ্ছুদের মধ্যে এ প্রজাতির বিচ্ছু পোষা প্রাণী হিসাবে ব্যবহার করা হয়।এরা আকৃতিতে বড় হওয়ায় এরা দেখতে তুলনামূলক ভাবে চিত্তাকর্ষক হয়। এ বিচ্ছুরা অনেক আকর্ষনীয় হয়। পোষা প্রাণী হিসাবে উপযুক্ত। যারা বিচ্ছু, মাকড়সা ইত্যাদি জাতীয় প্রাণী পোষার শখ তারা অনায়সে এ প্রজাতির বিচ্ছু পুষতে পারে। এর জন্য আলদাভাবে কোন প্রশিক্ষনের দরকার হয় না; এবং এ কাজে রিস্ক অনেক কম। এ ধরনের প্রাণী পোষাকে ”আর্চিনড পেট” বলা হয়। বিচ্ছু পোষার জন্য তেমন কোন বিশেষ কোন পরিবেশ বা জায়গার দরকার পড়ে না।
আপনি যে জায়গায় বাস করেন সেখানেও আপনি বিচ্ছুটি পোষা হিসাবে পালতে পারেন। এটি অনেক শান্ত, নিরীহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন প্রাণী এবং এদের যত্ন নেওয়াও অনেক সহজ।বিচ্ছুদের রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয় হল এদের বসবাসের জন্য উপযুক্ত উষ্ণতা ও আর্দ্রতা নিশ্চিত করা।বাড়িতে পোষার ক্ষেত্রে কাঁচের তৈরী অ্যাঁকুরিয়াম ট্যাঁংক অনেক সহজ উপয় গুলোর মধ্যে একটি। অ্যাঁকুরিয়াম এর মধ্যে আর্দ্রতার মাত্রা ৭৫% বজায় রাখা উচিৎ কৃত্রিম মিস্টিং করার মাধ্যমে। ট্যাঁংক এর মধ্যে স্যাতঁস্যাতেঁ ভাব থাকতে হবে কিন্তু ভেজা নয়। উষ্ণতার ক্ষেত্রে অনেক বিচ্ছুর মালিকরা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

এ প্রজাতির বিচ্ছুরা এক সাথে থাকবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।তবে কখনও যদি বিচ্ছুরা যদি এক জায়গায় বাস করে তবে সেখানে নরমাংসবাদ এর সম্ভবনা রয়েছে। নরমাংসবাদ বলতে স্ব-জাতি ভক্ষন অথবা কোন শিকারী প্রানীকে মেরে ভক্ষন করে থাকে। এসব বিচ্ছুরা ট্যাংক এবং বিভিন্ন টেরারিয়াম এ বসবাস করে। এ বিচ্ছুটি তার হুল ফুটিয়ে দেওয়ার চাইতে এর হুলে কিছু নখর রয়েছে যা দিয়ে সে আচড় দেওয়ার চেস্টা করে।
এতে করে শরীরের ঐ অংশ লাল বর্ণ ধারন করে।যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ বিচ্ছুটিকে আক্রমন অথবা মেরে ফেলার চেষ্টা না করে ততক্ষন পর্যন্ত বিচ্ছু আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে না।পরিশেষে এ বিচ্ছু সহজে মানুষের ক্ষতি করে না। অনেকে বাড়ি, রেস্তরা, অফিস ইত্যাদি জায়গাই সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য ব্যবহার করে থাকে।