ময়ূর পাখি অত্যান্ত সুন্দর । উড়ে যাওয়া সমস্ত পাখির মধ্যে অন্যতম পাখি ময়ূর। এই পাখির ইংরেজি নাম পিয়াফুল (Peafowl)। এদের বৈজ্ঞানিক নাম ফ্যাজিয়ানিডি (Phasianidae)। বেশিরভাগ লোকেরা তাদের ময়ূর বলে থাকেন তবে এটি কেবল এই পাখির পুরুষদেরই সঠিক নাম ময়ূর। ময়ূর পাখি এর ফিমেল প্রজাতিদের ময়ূরী বলা হয়। এই কারনে ময়ূরী নাম মেয়েদের ক্ষেত্রে অথবা মডেলের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। বিশ্বে তিন প্রকারের ময়ূর রয়েছে: ভারতীয়, সবুজ এবং কঙ্গো। বেশিরভাগ লোক ভারতীয় ময়ূরের সাথে পরিচিত, যেহেতু এটি অনেক চিড়িয়াখানা এবং পার্কগুলিতে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় ময়ূর বাস করে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে সবুজ ময়ূর পাওয়া যায়, এবং কঙ্গো ময়ূর মধ্য আফ্রিকা থেকে এসেছে। এরা সাধারনত বনে বসবাস করে লোকালয়েও দেখা যায় খুব কম। এরা বনের কীটপতঙ্গ, গাছের চারা, ফুলের পাপড়ী, এবং ছোট ছোট পোকামাকড় খায়। এরা ডিম পাড়ে এবং ডিম থেকে বাচ্চা ফোটায়। ময়ূর জন্মের পর থেকেই তার পেখম মেলাতে পারে না, এদের পুরুষদের ৩ বছর বয়স পর্যন্ত লেজ গজায় না। এমনকি অনেক দিন যাবত ময়ূর ময়ূরী হিসাবে চেনা যায়না, দীর্ঘ দিন পর্যন্ত এরা একই রকম হয়ে থাকে। এদের ৬ মাস বয়স হওয়ার পর থেকে রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করে। এদের আয়ু কাল ২০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিশ্বে তিন প্রকারের ময়ূর রয়েছে।
সবুজ ময়ূরঃ
সবুজ ময়ূর ড্রাগনবার্ড নামেও পরিচিত। এদের ইংরেজী নাম গ্রীন পিয়াফুল (Green peafowl)। এদের বৈজ্ঞানিক নাম পাভো মিউটিকাস (Pavo muticus)। ময়ূরের তিনটি প্রজাতির মধ্য এরা এক প্রজাতি, এরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনাঞ্চলের স্থানীয় একটি ময়ূর প্রজাতি। এরা অনেক শক্তিশালী হয় এবং এদের উড়াল অত্যান্ত দ্রুতগামী। এরা মাটিতে চলাফেরা করলেও এদের বৈশিষ্ট্যের কারনে এদের পাখিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কেননা পাখিরা উড়তে পারে। তবে ময়ূর ও কম বেশি উড়তে পারে।
এরা প্রাকৃতিক ডায়েটে মূলত বীজ, পোকামাকড়, সরীসৃপ, ফল এবং ছোট প্রাণী থাকে এরা বিষাক্ত সাপ শিকার করে থাকে। সবুজ ময়ূরের পুরুষদের গড় দৈর্ঘ্য ১০ ফুট (৩ মিটার) এবং ওজন ৫কেজি (১১ পাউন্ড) হয়ে থাকে। এদের মহিলাদের গড় দৈর্ঘ্য ৬.৬ ফুট (১.১ মিটার) এবং ওজন ২.৪ পাউন্ড (১.১ কেজি) হয়ে থাকে। এদের মহিলারা মাটিতে ডিম পাড়ে ৩-৬ টা এবং বাচ্চা ফুটায়।
কঙ্গো ময়ূরঃ
কঙ্গো ময়ূর আফ্রিকান পেঁয়াচু বা মুলু নামে পরিচিত। এদের ইংরেজী নাম কঙ্গো পিয়াফুল (Congo peafowl)। এদের বৈজ্ঞানিক নাম আফ্রোপাভো কনজেনসিস (Afropavo congensis)। এদের মহিলাদের দৈর্ঘ্যে ৬০-৬৩ সেন্টিমিটার (২৪-২৫ ইঞ্চি) অবধি হয়ে থাকে। এই প্রজাতির পুরুষ (ময়ূর) দৈর্ঘ্য ৬৪-৭০ সেমি (২৫-২৮ ইঞ্চি) অবধি বড় পাখি।
যদিও এর এশিয়াটিক কাজিনের তুলনায় অনেক কম চিত্তাকর্ষক, তবে পুরুষের পালকগুলি ধাতব সবুজ এবং ভায়োলেট রঙের সাথে গভীর নীল হয়ে থাকে। এরা খালি লাল ঘাড়ের ত্বক, ধূসর পা এবং চৌদ্দ লেজের পালকযুক্ত একটি কালো লেজ রয়েছে। এর মুকুটটি উল্লম্ব সাদা দীর্ঘায়িত চুলের মতো পালক দ্বারা সজ্জিত।
ইন্ডিয়ান ময়ূরঃ
ময়ূর ইন্ডিয়ার জাতীয় পাখি। ইন্ডিয়ান ময়ূর নীল পেঁয়াচু হিসাবে পরিচিত। এদের ইংরেজী নাম ইন্ডিয়ান পিয়াফুল ( Indian peafowl)। এদের বৈজ্ঞানিক নাম পাভো ক্রাইস্টাটাস (Pavo cristatus)। ইন্ডিয়ান ময়ূর দক্ষিণ এশিয়ার ভারত এবং শ্রীলঙ্কার স্থানীয়। এদের অন্যান্য পার্কগুলিতে, সাধারণত উদ্যান, চিড়িয়াখানা এবং প্রকৃতি কেন্দ্রগুলিতে বা গৃহপালিত পোষা প্রাণী হিসাবে প্রদর্শিত হয়।
এরা সাধারনত বীজ, পোকামাকড়, সরীসৃপ, ফল এবং ছোট প্রাণী খায়ে থাকে। এই ময়ুরের লেজগুলিকে আবৃত সুন্দর পালকগুলি পাখির দেহের চেয়ে দীর্ঘ ৫ ফুট (১.৫ মিটার) লম্বা এবং দর্শনীয় ফ্যানে প্রদর্শিত হতে পারে উজ্জ্বল রঙের। এদের দেহের পিঠে সাদা পেটের সাথে বাদামি। মেয়েদের দীর্ঘ লেজের পালক থাকে না তবে তাদের মাথায় ক্রেস্ট থাকে এবং সবুজ ঘাড়ের পালক থাকে।
আসুন পশুপাখির পাশে দাঁড়াই সুন্দর পরিবেশ গড়তে দশে মিলে হাত বাড়াই। পশুপাখি কে আপন করুন প্রকৃতি কে ভালবাসুন। বিভিন্ন পশুপাখির অজানা তথ্য সমুহ জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।