সাধারনত হিংস্র প্রানিদের তালিকায় বাঘ এবং সিংহ শীর্ষে থাকে। বাঘের বিভিন্ন প্রজাতি আছে। একই মনে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন আসতে পারে যে চিতা বাঘ এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার কি একই প্রজাতির কিংবা গোত্রের ? এই প্রশ্ন সকলের মনে বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত। বাঘ আমাদের জাতীয় পশু এবং সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য প্রানী হওয়াই এটি সারা বিশ্বে সমাদৃত। এমনকি এক নামে মানুষ জানে যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ( Mangrove Forest ) সুন্দরবনে দেখা মিলে।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর গায়ে কালো ডোরাকাটা দাগ রয়েছে একই সাথে এর রঙ লাল এবং হলুদ এর সংমিশ্রন অনেকটা ঝলসানো প্রকৃতির। কিন্তু এদের দেখতে যেমন আকর্ষনীয় তেমন সুন্দর লাগে। কারন এদের কোন কপি কিংবা সিমিলার কোন প্রানী নেই। এই বেঙ্গল টাইগার সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এদের বরফ অঞ্চলের দেখতে পাওয়া যায়। যেমনঃ সাইবেরিয়া। তবে সেগুলো দেখতে তুষারের ন্যায় শুভ্র হয় এবং কালো ডোরা কাটা দাগ থাকে।
চিতা বাঘ বেঙ্গল টাইগার থেকে আলাদা। শারীরিক গঠন বৈশিষ্ট্য এবং ফিজিক্যাল লুক এদের সম্পূর্ন ভিন্ন। সর্বোচ্চ গতিতে যদি এরা দৌড়াতে থাকে তাহলে এদের সাথে প্রতিযোগিতায় কেউ পারে না। তবে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফাররা এদের ছবি তুলতে বেশী পছন্দ করে বিশেষ করে রানিং অবস্থায় এবং শিকার ধরার মত অবস্থায়। এদের গায়ে বেঙ্গল টাইগারের মত ডোরাকাটা দাগ না থাকলেও কালো কালো স্পট রয়েছে। এদের পায়ে পেশী অনেক মাংসল এবং দ্রুত দৌড়াতে সাহায্য করে।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলঃ
- ওজনঃ প্রাপ্ত বয়স্ক হলে এরা দৈর্ঘ্যে ৯ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বাঘিনীরা ৮ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় এরা ৪২০ পাউন্ড বা ১৯০ কেজি পর্যন্ত হয় এবং বাঘিনীরা ১৪০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
- গর্জনঃ এদের গর্জন এত বেশী শক্তিশালী এবং এত জোরে করে থাকে যে তা মাইল দূর থেকেও শুনা যায়। এদের আক্রমনাত্মক ক্রিয়া কৌশল এত বেশী দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকে যে শিকারী এদের থেকে শক্তি শালী হলেও তা ঘায়েল করতে সক্ষম হয়। এদের থাবা সবচেয়ে ভয়ানক প্রকৃতির এবং দাঁত ধারালো হয়।

- দাঁতঃ মানুষের দুই পাটিতে ৩২ টি দাঁত থাকে। এবং খেয়াল করবেন যে দাঁতের স্ট্রাকচার ভিন্ন ভিন্ন হয়। এই কারনে বিভিন্ন দাঁতের কাজ বিভিন্ন প্রকৃতির। তেমনি ভাবে এক প্রকার ধারালো দাঁত থাকে নাম ক্যানেইন। এই দাতের কাজ হল যে কোন খাদ্য পেষন করা কিংবা ছিদ্র করা। অনেকটা ধারলো এবং সূচালো প্রকৃতির। এদের ক্যানেইন দাঁত ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে যা সিংহের দাঁতের চেয়েও বড়।
- অসামাজিকঃ হরিন সহ অন্যান্য প্রানি দল বেঁধে থাকলেও বাঘ একমাত্র প্রানী যারা দল বেধে থাকে না। তবে এরা পরিবার গঠন করে একক পরিবারে থাকা পছন্দ করে। ৩-৪ জন বাঘ একত্রে থাকতে পারে। তার বেশি নয়।

- দক্ষ সাতারুঃ বেঙ্গল টাইগার সাঁতার কাটতে পারে। এই কারনে সুন্দর বন এলাকায় দেখা যায় এরা প্রায়ই নদী পার হয় সাঁতার কাটে। মাঝ নদীতে গভীরতা হওয়ার পরও এরা ডুবে না বরং সাতার কাটে ঐ পারে ঠিকই পৌছে। তবে মাঝে মধ্যে কুমিরের সাথে দেখা হলে লড়াই ও করে থাকে।
চিতা বাঘ সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্যঃ
- বাসস্থানঃ বেশিভাগ ক্ষেত্রে এদের সাব-সাহারান আফ্রিকান অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। সাভানা অঞ্চলের উন্মুক্ত বিচরন ভূমিতে এদের দেখা যায়। এদের শিকার ধরার জন্য বেশ কিছু জায়গায় ফাঁদ পাততে হয়। এরা গাছে উঠতে পারে।
- ওজনঃ এরা দৈর্ঘ্যের দিক থেকে ১.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। যেহেতু দ্রুত গতিতে এরা দৌড়ায় সেহেতু এদের ওজন অনেক হালকা বেঙ্গল টাইগারের তুলনায়। এখন কত কম হতে পারে চিন্তা করুন। স্ত্রী প্রজাতির চিতা বাঘ ৩৪ থেকে ৫৪ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে পুরুষ চিতা বাঘ তার থেকে সামান্য ভারী প্রকৃতির হয়ে থাকে।

- দ্রুততম প্রানীঃ অন্য যে কোন প্রানীর চেয়ে এরা খুব বেশী দ্রুত দৌড়ায়। এরা ঘণ্টায় ১১২ কিমি দুরত্ব অতিক্রম করতে পারে। এই স্পিড একটি স্পোর্টস কারের এক্সিলারেট এর চেয়ে অনেক বেশী। এই হিসেবে এরা মিনিটে২০০-৩০০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের গায়ের রং হলদেটে ধরনের এবং এদের গায়ের উপর সার্কেল আছে কালো কালো। এরা আফ্রিকার মাটিতেই বেশী থাকতে পছন্দ করে।
- সামাজিকতাঃ বেঙ্গল টাইগার শুধুমাত্র তার পরিবারের সাথেও থাকে। এবং বিশেষ ক্ষেত্রে এরা একা অথবা কারও সাথে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু চিতা বাঘ সামাজিক প্রানী। এরা যৌথ পরিবারের মত করে থাকা পছন্দ করে। এরা দিনে এবং রাতেও শিকার করতে পারে।
পরিশেষে, রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং চিতা বাঘ সম্পর্কে বেসিক কিছু তথ্য তুলে ধরা হল। এমন আরও বিভিন্ন ধরনের কিছু ইউনিক তথ্য রয়েছে। যা অন্য আর্টিকেলে তুলে ধরা হবে। লেখাটি কেমন লাগল তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। সেই সাথে লেখটি আপনারা আপনাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। ততক্ষন পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।