পশু পালন বলতে আমরা গৃহপালিত পশুকে বাড়ীতে লালন-পালন করাকে বুঝি। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, ভেড়া সহ অন্যান্য আরও কিছু প্রানী আছে যা গৃহপালিত প্রানী এর তালিকায় পড়ে। বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ এবং অসংখ্য নদ-নদী বাংলাদেশের বুক চিরে বয়ে চলে গেছে। কৃষি নির্ভর অর্থনীতি হওয়ার মূল কারন হল আমাদের দেশের মানুষের জীবন জীবিকা কৃষিকাজ নির্ভর। তবে এই কৃষি কাজের মাত্রা গ্রামীন অঞ্চলে বেশি এবং শহর কিংবা নগরীর বুকে খুব কমই দেখা যায়।
বর্তমানে গ্রামে বেকার যুবক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহনের কারনে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছে। এই কারনে গ্রামে এখন শুধু কৃষি নির্ভরতা ছাড়াও অন্য পেশায় মানুষ নিয়োজিত হচ্ছে এবং নিজেদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। স্বাবলম্বী হওয়ার কয়েকটি উদ্যোগের মাঝে গরু -ছাগল লালন পালন করা উল্লেখযোগ্য। এই কাজটি পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও করতে পারে।তবে গরু পালন করার চেয়ে ছাগল পালন করা অত্যান্ত লাভজনক কেননা খরচ কম। কাজ তুলনামূলক সহজ এবং ঝুকিও কম। এছাড়াও ছাগলের চাহিদা অনেক বেশি অন্য যে কোন প্রানীর চেয়ে। আজকে এই আর্টিকেলে ছাগল পালনের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানব।
ছাগল পালনের আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বেশী কারন বাজারে ছাগলের উচ্চ চাহিদা এবং বিভিন্ন জাতের ছাগলের প্রাপ্যতা। সব সময় সব জাতের ছাগল এভেইলএবল পাওয়া যায় না। তবে আপনি যদি ছাগলের খামার করতে ইন্টারেস্টেড থাকেন তাহলে খামার শুরু করার পূর্বে কিছু বিষয়ের দিক আপনাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যান্য প্রানীদের চেয়ে ইন্ডিয়াতে এবং বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে ছাগল পালন করে আসছে। পূর্বেও আমাদের দেশে ছাগল পালন করা হত তবে তা অত্যান্ত ক্ষুদ্র পরিসরে গৃহপালিত পর্যায়ের। রাজহাঁস-পাতিহাঁসের মাধ্যে কোনটি পালন লাভজনক হবে?
তবে দিন যাচ্ছে পশু পালনের জন্য খামার এর সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে। বর্তমানে বানিজ্যিক পর্যায়ে ছাগল পালন করে থাকে। এই কারনে ছাগলের খামার বর্তমানে বিশ্বের সকল দেশগুলোতেই কম বেশি দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন করে খাদ্যের চাহিদা তৈরি হয়েছে। ছাগল খাদ্যের চাহিদা পূরনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। আপনি যদি নতুন উদ্যোক্তা হন এবং ছাগল পালন বা ছাগলের খামার করতে ইচ্ছুক তাহলে আপনার সিদ্ধান্ত সঠিক। কেন তা সঠিক তা নিচে তুলে ধরা হলঃ
স্বল্প জায়গা প্রয়োজনঃ
আকারে ছোট হওয়ার কারনে অন্যান্য গৃহপালিত প্রানিদের চেয়ে এদের খুব কম পরিমান জায়গার দরকার পড়ে। এদের আলাদা আলাদা ঘরের দরকার পড়ে না। বরং ন্যুনতম চাহিদা সম্পন্ন একটা ঘরই যথেষ্ট। সেখানে এক জায়গায় অনেক গুলো ছাগল একসাথে থাকতে পারবে। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা হল আপনাকে ঘরের ক্ষেত্রফল বা সাইজ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাগল রাখলে ভাল হয়।
কম খাদ্যের প্রয়োজনঃ
অন্য গৃহপালিত প্রানীরা আকারে বড় হয় এবং তাদের খাবারের পরিমানও বেশি দরকার লাগে। (যেমনঃ গরু ) কিন্তু ছাগল আকারে ছোট হওয়ার কারনে এদের খাবার অনেক কম দরকার পড়ে। এতে করে খাবারে খরচ কম হয়। কিন্তু দিনে রুটিনমত খাবার দিলেই এরা অল্প সময়ের মধ্যে সঠিক গঠনের হয়ে যায়। প্রজাতিভেদে ছাগলের বাচ্চার সংখ্যা কম বেশি হওয়ার কারনে এদের বংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে ছাগলের সংখ্যা বেড়ে যায়।
বহুমাত্রিক ব্যবহারঃ
ছাগলের খামার আপনি যে কোন একটি মাত্র উদ্দেশ্যে করেন না কেন, কোন কারনে আপনি আপনার টার্গেট মিট আপ না করলে ছাগলের মাংস এবং দুধ বিক্রি করে আপনি আপনার ক্ষতি কিছুটা কমাতে পারেন। বেশি ভাগ খামার বর্তমানে এই তিনটি উদ্দেশ্য মাথায় রেখেই করা হয়। ছাগল লালল পালন করার সময় আপনার লো মেইনটেনেন্স খরচের দরকার পড়ে। এরা নিরীহ প্রানী হওয়ার কারনে এদের যে কেউ দেখা শুনা করতে পারে একই সাথে বাচ্চা এবং মহিলারাও দেখাশোনা করতে পারে। এই বিষয়টি অন্য যে কোন পশু পালন হতে খরচ বহুগুনে কমিয়ে থাকে।
দ্রুত বৃদ্ধিঃ
ছাগল অন্য যে কোন প্রানীর চেয়ে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজেকে পরিবেশের সাথে খাপখাইয়ে নেয়। এই কারনে এরা আবহওয়া যতই পরিবর্তন হোক না কেন এদের তেমন সমস্যা হয় না। নিয়ম মত খাবার দিলে এরা খুব অল্প সময়ে বড় হয়ে উঠে। বাজারে ছাগলের দুধ এবং মাংসের বিপুল চাহিদা থাকার কারনে প্রোডাক্ট মার্কেটে সবসময় রেডি টু গো অবস্থায় থাকে। এওি কারনে বিক্রিয় সময় বেশি ঝামেলা সহ্য করতে হয়। এছাড়াও ছাগল সকল ধর্মের মানুষই খেয়ে থাকে।
পরিশেষে, এই সব কারনে ছাগল পালন করে আপনি লাভবান হতে পারে। অনেকেই অন্য প্রানী কিংবা গরু পালন করার সিদ্ধান্ত দিতে পারে কিন্তু ছাগল পালন উপরে উল্লেখিত কারনে আপনার জন্য বেস্ট অপশন হতে পারে। এত সুবিধা থাকার পরেও কেন আপনি ছাগল পালন করবেন না? তবে একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে পশু পালন করলে পশুর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিক্ষার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিলে কোন ঝুকি থাকবে না।