প্রাণীজগতে আমরা অনেক প্রাণীই সাধারন আলোতে নিরাপদে দেখতে পারি। কিন্তু সাধারন আলো ছাড়াও আরও অন্যান্য আলো আছে। সাদা আলো প্রিজম নামক ত্রিকোণ আকৃতির বস্তুর মধ্যে দিয়ে গেলে তা বে-নী-আ-স-হ-ক-লা নামক সাতটি রঙে রূপান্তরিত হয়। এ ছাড়াও আমরা অতি-বেগুনি রশ্মি এবং অবলোহিত রশ্মি দৈনিন্দন অনেক বস্তুতে এবং কাজে ব্যাবহার করে থাকি। রিমোট কন্ট্রোল গাড়িতে, সিসিটিভি ক্যামেরায়, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়া,ফেস রিকগনাইজেশন, রেটিনা স্ক্যান সহ বিভিন্ন কাজে অবলোহিত রশ্মি ব্যবহৃত হয়। অবলোহিত রশ্মিতে যে সব প্রাণী পরিষ্কার ভাবে দেখতে পারে তা নিচে তুলে ধরা হল
স্যালমন মাছঃ
এ মাছ বার্ষিক স্থানান্তরের জন্য নিজেদেরকে অনেক পরিবর্তন করে। কিছু কিছু প্রজাতি নিজেদের শরীরের এত পরিবর্তন করে ফেলে যে আকৃতির পরিবর্তন ঘটে। এদের মুখের চোয়াল অনেক শক্ত হয় এবং দাঁত অনেক বড় হয়। চোয়ালের রং পরিবর্তনের মাধ্যমে এরা তাদের সঙ্গীকে মিলনের জন্য আকৃষ্ট করে। এদের যাত্রা শুরু হয় সমুদ্রের নোনা পানি হতে এবং শেষ হয় মিঠা পানিতে নিজেদের রাখার উপযুক্ত করে তুলতে।এ যাত্রা পথের পানিতে বিদ্যমান কেমিক্যাল বিক্রিয়ার মাধ্যমে এরা লাল এবং অবলোহিত আলো দেখার সামর্থ্য অর্জন করে।
এতে করে তারা সুন্দর ভাবে অবলোহিত আলোতে চারপাশ দেখতে পারে এবং খাবার খুঁজতে পারে। ধারনা করা হয় এনজাইম এবং ভিটামিনের পরিবর্তনের কারনে এরূপ ঘটে।মানুষ যে সব প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী সম্পর্কে জানে না
বুল ফ্রগঃ
এরা এদের ধৈর্য এবং শিকারেরে পদ্ধতির জন্য বিখ্যাত। এরা কখনই শিকারের কাছে যায় না বরং শিকার এদের কাছে আসে এমন জায়গায় এরা অপেক্ষা করে। এরা নিজেদের ছদ্মবেশে চারপাশের পরিবেশের সাথে সহজে মানিয়ে নিতে পছন্দ করে। স্যালমন এর মত এরাও ভিটামিন এবং এনজাইমের মিশ্রনের জন্য এমন দেখতে পারে।
এরা ব্যাঙাচি থেকে যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তখন এদের ভিটামিন এর পরিবর্তনের জন্য অবলোহিত আলোতে দেখতে পারে। মুক্ত পরিবেশে এরা ভালভাবেই দেখতে পারে। এমনকি এরা বাতাসে এবং পানির নিচেও অবলোহিত আলো বিশিষ্ট কোন কিছু থাকলে এরা স্পষ্ট দেখতে পারে। এরা মাঝে মাঝে পানির ভিতর বসে থাকলেও চোখ এবং মাথা পানির উপরে থাকে। এরা মশা, মাছি সহ বিভিন্ন পোকামাকড় খেয়ে থাকে।
পিট ভাইপার সাপঃ
র্যাটেল স্নেকের মত ভাইপার সাপও অবলোহিত আলোতে ঘ্রান শক্তি সক্রিয় হয়। এদের শরীরে পিট অর্গান নামে এক ধরনের অর্গান আছে যা তাপমাত্রা ডিটেক্ট করতে পছন্দ করে থাকে। এদের মুখের চোয়াল তাপমত্রা ডিটেক্ট করতে সাহায্য করে থাকে। এই পিট অর্গান তাদের স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রন করে থাকে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে থাকে।
এর মাধ্যমে এ সাপগুলো রাতের আঁধারেও চোখের মাধ্যমে ডিটেক্ট করে থাকে। তাদের শরীরে এনযাইম এবং প্রোটিন স্নায়ুর মাধ্যমে চোখের রেটিনাকে অবলোহিত আলো ডিটেক্ট করতে সহযোগিতা করে।
মশাঃ
মানুষ সহ অন্যান্য প্রানীর শরীররের কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমানের উপর নির্ভর করে রক্ত চোষা প্রাণী গুলো খাবারের সন্ধানে বের হয়। মশা অবলোহিত রশ্মির সাহায্যে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করতে পারে।
২০১৫ সালে গবেষনায় দেখা গেছে মশা তার চোখের অবলোহিত রশ্মির সাহায্যে শরীরের তাপমাত্রা ডিটেক্ট করে এবং তার নিকটে যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমানের উপর নির্ভর করে। যদিও মশা কয়েকফিট দূরে থাকলেই আমরা সহজেই বুঝে নিতে পারি।
ভ্যাম্পয়ার বাদুড়ঃ
ভাইপার এবং পাইথন এর মত এদের নাক দিয়ে অবলোহিত আলো ডিটেক্টেশন এর জন্য ব্যবস্থা এদের একই ধরনের প্রজাতি আছে যারা তারা ভিন্ন তাপমাত্রায় দুটি বিষয় এর নির্ভর করে । এক ধরনের প্রোটিন তাপমাত্র ডিটেক্ট করে থাকে আবার অন্য প্রোটিন অবলোহিত আলো এর মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তু ডিটেক্ট করে থাকে। এদের তাপমাত্রা ১০৯ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত ডিটেক্ট করে থাকে যা তাদের জন্য কষ্ট দায়ক। কেননা এরা সাধারনত ৮৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত ডিটেক্ট করতে পারে।
পরিশেষে, অবলোহিত আলোতে সব প্রাণী দেখেত পারেনা। মাত্র গুটিকয়েক প্রানি এ বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী। অবলোহিত আলোতে দেখতে পাওয়া বিচিত্র প্রাণীর সম্পর্কে বিচিত্র তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন। আপনার মুল্যবান মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের সাথে শেয়ার করুন।