গন্ডার পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন প্রজাতির প্রানীদের মধ্যে অন্যতম। এজন্য এদেরকে আইকনিক প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হয়।প্রাচীন যুগের বিশেষ প্রাণী হাওয়ায় বর্তমান পর্যন্ত টিকে থাকা তাদের জন্য গর্বের একটি বিষয়। ধারণা করা হয় এদের আবির্ভাব ৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বে হয়েছিল। এদের বিভিন্ন কীর্তিকলাপ এবং উৎপত্তি সম্পর্কে আজকে জানবো। তবে এখানে বলে রাখা ভাল, যে গন্ডার কে ইংরেজিতে “Rhinoceros” বলা হয়। গ্রিক শব্দ “Rhino” অর্থ নাক এবং “Ceros” অর্থ শিং। প্রকৃতপক্ষে এদের শিং নাকের স্থানে হওয়ায় এমন নামকরণ করা হয়েছে।এখন আমরা গন্ডার সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য জানবো
গন্ডারের প্রজাতিঃ
বর্তমানে পৃথিবীতে মোট ৫ প্রজাতির গন্ডার রয়েছে। এদের মধ্যে দুটি প্রজাতি আফ্রিকার এবং তিনটি এশীয় অঞ্চলের। আফ্রিকান প্রজাতির মধ্যে কালো এবং সাদা রঙের গন্ডার বিদ্যমান। তবে আফ্রিকার কালো গন্ডার এবং জাভান প্রজাতির গন্ডারের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে।এ প্রজাতি কিছুটা বিলুপ্তির পথে। ধারণা করা হয় আগামী তিন প্রজন্ম পর্যন্ত এরা সর্বোচ্চ টিকে থাকতে পারবে। তারপর হয়তও এদের আর দেখা মিলবে না। যদিও প্রাণীদের বিলুপ্তির পিছনে মানুষ অনেক ভাবে দায়ী।
গণ্ডারের ওজনঃ
৫ প্রজাতির গন্ডারই ওজনে ১০০০কেজি উপরে হয়ে থাকে। বাচ্চা অবস্থায় এদের ওজন কম হলেও, প্রাপ্তবয়স্ক হলে এদের সর্বনিম্ন ওজন ১০০০ কেজি পর্যন্ত হয়। তবে সাদা প্রজাতির গন্ডার সর্বোচ্চ ৩৫০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এজন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে হাতির পরে এর অবস্থান।
জলহস্তী সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন
আকার-আকৃতিঃ
এদের দেহের আকার-আকৃতি, ওজন সবকিছু বেশি হলেও, মস্তিষ্ক অনেক ছোট। অর্থাৎ কোন প্রাণীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে অনেক কিছু বেশি থাকলেও এদের মস্তিষ্ক ক্ষুদ্র প্রকৃতির কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে এদের বুদ্ধি কম। কেউ যদি এর বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সন্দেহ করে, তবে তাকে অনেক সময় মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে।
উপাদানঃ
এদের শরীর ক্যারোটিন নামক প্রোটিন দ্বারা তৈরি। মানুষের নখ চুল ইত্যাদি যেসব প্রোটিন দ্বারা তৈরি, গন্ডারের শরীরের অধিকাংশ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমনকি শিং একই প্রোটিন দ্বারা তৈরি। অনেকে ধারণা করে গন্ডারের শিং তাদের মস্তিষ্কের সাথে সংযুক্ত। কিন্তু এমনটা সত্য নয় বরং কিছু চুল একত্রিত হয়ে জমাট বেঁধে থাকে। যা পরবর্তীতে শিং এ পরিনত হয়েছে।
বৃদ্ধিঃ
মানুষের যেমন বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাত পা এমনকি হাতের নখ ইত্যাদি বৃদ্ধি পেতে থাকে, একইভাবে এদের শিংও বৃদ্ধি পায়। এদের শিং সাধারণত ৪ ফুট ৯ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে ।অনেক জায়গায় সাদা প্রজাতির গন্ডারের কথা বললেও, আসলে এরা প্রকৃতপক্ষে সাদা নয়। এরা মূলত ধূসর রংয়ের হয়।
এরা দলবদ্ধ হয়ে বাস করে এবং লম্বায় 6 ফুট পর্যন্ত হয়। দৈর্ঘ্যের দিক থেকে ১১ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এজন্য এদের বড় প্রাণী হিসেবে ধরা হয়। ঘোড়া এবং জেব্রাকে এদের আত্মীয় হিসেবে গণ্য করা হয়।
ক্ষমতাঃ
এদের ওজন বেশি হওয়ার পরও এরা দ্রুত গতিতে দৌড়াতে পারে। প্রতি ঘন্টায় ৩০-৪০ কি.মি পর্যন্ত দৌড়ায়। অন্যদিকে উসাইন বোল্ট ঘণ্টায় ২৮ কিলোমিটার বেগে দৌড়ায়। সুতরাং এরা বোল্টের থেকেও দ্রুত দৌড়াতে পারে।এদের দৃষ্টিশক্তি খুব একটা ভালো না। সামান্য ৩০ মিটার দূরে অবস্থিত কোন
কিছু সহজে দেখতে পায় না। কিন্তু এদের ঘ্রাণশক্তি অনেক তীব্র এবং সেন্স বেশি কাজ করে। এজন্য অল্প দূরত্বে কিংবা বেশি দূরত্বে যেখানেই প্রাণী অপেক্ষা বা শব্দ যাই করুক না কেন, এরা সহজেই তা বুঝতে পারে এবং আক্রমণ করে থাকে। আক্রমণ কখনো বৃথা যায় না।
যোগাযোগঃ
এরা একে অপরের সাথে নিজেদের ত্যাগকৃত মলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকে। প্রতিটি গন্ডারের মলের এক ধরনের ইউনিক গন্ধ থাকে। এর মাধ্যমে এক অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এমনকি মলের প্রকৃতি সহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বোঝা যায় গন্ডার শিশু নাকি প্রাপ্তবয়স্ক। পুরুষ নাকি মহিলা।
পরিশেষে, গন্ডার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম। পড়ে কেমন লাগল এবং এ সম্পর্কে আপনাদের মতামত কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে শেয়ার করুন। বন্য প্রানীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।