জলহস্তী বৃহৎ প্রাণী। প্রানীরা সাধারনত জলে, স্থলে এবং আকাশে পরভ্রমন করে বেড়ায়। এদের মধ্যে কিছু প্রানী আছে যারা উভচর প্রানী হিসাবে গণ্য করা হয়। তেমনি প্রানীদের তালিকায় জলহস্তি রয়েছে। এরা দেখতে অনেক বৃহৎ আকৃতির এবং জলে ও ডাঙ্গায় উভয় যায়গায় এরা বাস করে। এ কারনে এদের উভচর প্রানী বলা হয়। বর্তমানে চিড়িয়াখানাতে গেলে এদের সহজেই দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া এরা বনে বাস করতে স্বাচছন্দ্যবোধ করবে এটাই স্বাভাবিক। জলহস্তি সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জেনে নিই।
বড় আকারঃ
এরা বৃহৎ আকৃতির আধা-জলজ স্তন্যপায়ী প্রানী। ছোট লেজ এবং পা বিশিষ্ট বড় ব্যারেল আকৃতির শরীর এদের। উল্লেখ্য যে এদের মাথা বিশাল আকৃতির। এদের শরীর ধূসর অথবা কাঁদা-যুক্ত বাদামী বর্ণের। যদিও পরবর্তীতে এদের গায়ের রঙ ফ্যাকাশে এবং বিবর্ন হয়ে যায়।
বৃহৎ প্রানিঃ
এদেরকে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ স্থলচর প্রানী হিসাবে ধরা হয়। প্রথম অবস্থানে হাতি দখল করে রয়েছে। পুরুষ প্রজাতির জলহস্তীর দৈর্ঘ্য ৩.৫ মিটার এবং উচ্চতা ১.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা ওজনে ৩২০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে ; যা ছোট ছোট তিনটি কার গাড়ির ওজনের সমান।
হাতিদের সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন।
আফ্রিকায় বাসঃ
আমাদের দেশে ছাড়াও আফ্রিকাতে এদের বেশি দেখা যায়। আফ্রিকার গরম সহ্য করতে না পারায় এরা নদী এবং লেকের পাশে এরা বসবাস করে। চোখ, কান এবং নাক মাথার উপরিভাগে অবস্থিত হওয়ায় এরা সহজেই নদীর জলে নিজেদের শরীর ডুবে রাখতে পারে অনায়সেই।
নতুন বাসাঃ
কোন এক সময় এদের সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে এদের খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে মানুষের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় এরা শিকারিদের দ্বারা শিকার হতে থাকে এবং এদের ঐ অঞ্চলে মানুষ বসবাস করা শুরু করে।
খাদ্যঃ
এরা নিশাচর প্রাণী। এজন্য এরা রাতের বেলায় খাবারের খোঁজে বের হয় এবং খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। এরা রাতের বেলায় তৃণভোজী খাবার খেয়ে থাকে। পছন্দের তৃনভোজী খাবার পেলে এরা একসাথে ৩৫ কেজি পর্যন্ত খাবার খেয়ে থাকে।
সুইমারঃ
এত বড় প্রানী হওয়া সত্ত্বেও এরা খুব দক্ষ সাঁতারু এবং পানির নিচে এরা পাঁচ মিনিট পর্যন্ত নিঃশ্বাস ধরে রাখতে পারে। পানির নিচে ডুব দিলে এরা এদের নাক এবং কান অটোমেটিক বন্ধ করে হয়ে যায়। যা তে করে পানি নাক এবং কানে না ঢুকতে পারে।
গ্রুপিংঃ
এরা গ্রুপে চলাচল করা পছন্দ করে। এদের গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ২০ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে। পুরুষ জলহস্তী গ্রুপের নেতৃত্ব দেয়। গ্রুপের বাকি সদস্যা স্ত্রী জাতের হয়।
দায়িত্ববোধঃ
প্রভাবশালী পুরুষ প্রজাতির জলহস্তী তাদের নিজেদের গ্রুপের প্রতি সংরক্ষণশীল। প্রভাবশালী পুরুষের অধীনে অনেক গ্রুপ রয়েছে। একে অপরের প্রতি ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য এরা প্রায়ই ডিসপ্লে প্রদর্শন করে থাকে। মুখ বড় আকারে খোলা এবং হুংকার দেওয়া সহ বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ করে থাকে।
বংশ রক্ষাঃ
স্ত্রী প্রজাতির জলহস্তীদের গাভী বলা হয়। এরা ২ বছর পর পর বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকে। এরা সাধারনত একবারে একটি বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকে। এরপর এরা কোন শক্তিশালী পুরুষের নেতৃত্বে তাদের গ্রুপে ঢুকে পড়ে। সিংহ, হায়েনা, কুমির সহ আরও হিংস্র প্রানীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এরা এমন করে থাকে।
জীবনকালঃ
এরা এদের জীবনদ্দশায় ৪০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে বন্দী অবস্থায় এরা ৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এরা তাদের ক্ষমতা সহজে হারাতে চায় না। কিন্তু প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই এ এরা হয় বেঁচে থাকে অথবা মারা যায়। কোন ক্ষেত্রে তারা পরাজয় স্বীকার করে নিলেও অসম্মনের জীবন এরা অতিবাহিত করতে পাছন্দ করে না।
পরিশেষে, জলহস্তী সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম। পড়ে কেমন লাগল এবং এ সম্পর্কে আপনাদের মতামত কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে শেয়ার করুন। বন্য প্রানীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।