লাফানো প্রানী প্রাণীজগতে প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। এর মধ্যে কেউ লাফিয়ে চলে কেউ ধীরগতিতে হাটে কেউ দৌড়াই অথবা কেউ সাঁতার কাটে। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে প্রাণীদের নির্দিষ্ট শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এমন ভাগ করা ক্ষেত্রে কিছু বিষয় এর প্রতি গুরুত্ব দিলে আমরা আমাদের চাহিদা মত উত্তর পেয়ে থাকি। জলজ এবং উভচর প্রাণী গুলো জলের ঠিক মত চলাফেরা করতে পারে। আবার বন্য তৃণভোজী ও মাংসাশী প্রাণী গুলো বন-জঙ্গল এমনকি পাহাড়েও চলতে ফিরতে পারে। বিভিন্ন প্রাণীর চলাফেরা বিভিন্ন রকম হলেও আমরা আজকে সেসব প্রাণী সম্পর্কে জানব যারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গমন করার জন্য লাফিয়ে চলে। চলুন জেনে নেওয়া যাকঃ
খরগোশঃ
প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দ্রুত দৌড়াতে এবং বেশি দূর পর্যন্ত লাফাতে সক্ষম। এরা প্রতি ঘন্টায় ৭২ কিলোমিটার অথবা ৪৫ মাইল পর্যন্ত দ্রুত দৌড়াতে পারে। এ গতির কারণে অন্য সকল প্রাণী সহজেই একে ধরতে পারে না। অনেকক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে থাকে।

রেড ক্যাঙ্গারুঃ
এ প্রজাতির ক্যাঙ্গারু স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে পরে। স্তন্যপায়ী প্রাণী হওয়ার সাধারণ বৈশিষ্ট্য গুলো মিল থাকায় এরা এবং আমরা একই শ্রেণীর অন্তর্গত। অর্থাৎ মানুষ ও স্তন্যপায়ী অন্তর্ভুক্ত। অন্য সব প্রাণী থেকে ক্যাঙ্গারুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এরা লাফিয়ে লাফিয়ে বহুদূর পর্যন্ত চলতে পারে।
এজন্য এরা প্রতি ঘন্টায় লাফিয়ে লাফিয়ে ৫৬ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।

লাফানো প্রানীঃ
আমরা এ প্রজাতির প্রাণী সম্পর্কে অনেকটা কম জানি। কিন্তু এরা আমাদের খুব কাছেই থাকে। হিমালয়ের পাদদেশে এবং ওই অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় এদের সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। জন্মের পর থেকে ওই পরিবেশের সাথে নিজেদের এমনভাবে খাপখাইয়ে নিয়েছে যে তারা অতি সহজে পাহাড় এবং পাথরের মধ্যে দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত অল্প সময়ে চলতে পারে। এজন্য এরা বেস্ট জাম্পার হিসেবে পরিচিত। এর নাম ভাড়াল।

ক্লিস্প্রিংগারঃ
প্রাণীটি দেখতে অনেক নিরীহ এবং এর উচ্চতা ১.৫ মিটার বা ৫ ইঞ্চি। এটি দেখতে ক্যাঙ্গারুর মত না হলেও এরা এদের উচ্চতার থেকে ১০ গুণ বেশি উঁচুতে লাফাতে পারে। এ বৈশিষ্ট্যই বাকি সকল প্রাণী থেকে আলাদা করেছে এবং শরীর ও স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে এরা সর্বোচ্চ উচ্চতা পর্যন্ত লাফাতে পারে।

ঘাসফড়িংঃ
আমাদের চারপাশে যেখানে সেখানে এদের আমরা দেখতে পাই। এদের শরীরের আকার আকৃতি অত্যন্ত ক্ষুদ্র। কিন্তু মজার বিষয় হলো এদের শরীরের আকারের থেকে ২০ গুণ বেশি উচ্চতা পর্যন্ত এরা লাফাতে পারে। সহজভাবে বলতে গেলে একজন স্বাভাবিক মানুষ বাস্কেটবল কোর্টে যে উচ্চতা পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে লাফাতে পারে ঘাসফড়িং সমান উচ্চতা পর্যন্ত অনায়াসে লাফাতে পারে।

ক্যাঙারু র্যাটঃ
এন নামের শুরুতে ক্যাঙ্গারু থাকলেও এরা প্রকৃতপক্ষে এক প্রজাতির ইঁদুর। এরা এদের শরীরের আকার আকৃতির থেকে 45 গুণ বেশি উচ্চতায় অথবা দূরত্ব পর্যন্ত লাফাতে পারে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে এরাও বেশি উচ্চতা পর্যন্ত লাফানোর খেতাব পেয়েছে।

ফ্রগহপারঃ
নাম পড়ে অনেকের মনে হতে পারে এটি ব্যাঙ। কিন্তু আসলে তা নয়। এরা খুব ক্ষুদ্রাকৃতির উড়ন্ত পোকা। এরা এদের শরীরের আকৃতি থেকে ৭০ গুণ বেশি দূরত্ব উচ্চতা পর্যন্ত লাফাতে পারে। মজার ব্যাপার হলো অন্য প্রাণীর চেয়ে এরা লাফানোর ক্ষেত্রে বেশি শক্তি প্রয়োগ করে থাকে। শক্তির পরিমাণ এত বেশি হয়ে থাকে যে তারা তাদের শরীরের ওজনের থেকে ৪০০ গুণ বেশি হয়।

মাকড়সাঃ
মাকড়সা হেঁটে চলে এটা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু মাঝে মাঝে এরা লাফায় ও বটে। এরা এদের শরীরের দুর্বল ১০০ গুণ বেশি উচ্চতার দূরত্ব পর্যন্ত লাফাতে পারে।

গেছো ব্যাঙঃ
সকল প্রজাতির ব্যাঙ কমবেশি লাফাতে পারে। কিন্তু গেছো ব্যাঙ তাজমহলের দৈর্ঘ্য থেকে ১৫০ গুণ বেশি দূর পর্যন্ত লাফিয়ে চলতে পারে। এজন্য লাফিয়ে চলা প্রাণীদের তালিকায় এর স্থান দ্বিতীয়।
এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন

ফ্লিয়াঃ
দুনিয়ার সকল ছোট-বড় যে কোন লাফিয়া চলা প্রাণীদের মধ্যে এদের সবার সেরা হিসেবে ধরা হয়। কেননা অন্য সব প্রাণী থেকে দূরত্ব এবং উচ্চতার দিক থেকে এরাই সর্বদা এগিয়ে। নিজস্ব শরীরের দৈর্ঘ্যের ২২০ গুণ বেশি দূরত্ব এবং শরীরের উচ্চতার তুলনায় ১৫০ গুণ বেশি উচ্চতা অতিক্রম করে থাকে। হিসেব করে দেখা গেছে এরা গড়ে ৪০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত লাফাতে পারে।

পরিশেষে, দক্ষ লাফানো প্রাণীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। পড়ে কেমন লাগল এবং এ সম্পর্কে আপনাদের মতামত কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে শেয়ার করুন।