তুমি যদি বন্যপ্রাণী হও এবং প্রচন্ড তীব্র শীতের মধ্যে সার্ভাইভ করতে হয় তাহলে খাদ্য ঘাটতি বিরাট এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু পরিবেশ যতই প্রতিকূল হোক প্রাণীরা প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা শিখে যায়। তীব্র শীতে প্রানীদের সার্ভাইভ স্কিলকে শীতনিদ্রা বুঝায়। তবে এজন্য তাদের কিছু বিশেষ কিছু তে রপ্ত করতে হয়। এমন একটি বিশেষ পদ্ধতি হলো শীতনিদ্রা।অনেকে এটিকে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুম পাড়া মনে করলেও বাস্তবে তা নয়।
বরং এ প্রক্রিয়ার কারণে শরীরের বিপাক ক্রিয়ার হার কমে যায় এতে করে শরীরের তাপমাত্রা হৃদস্পন্দন শ্বাস-প্রশ্বাস ইত্যাদি ধীর গতির হতে থাকে।এরকম হওয়ার কারণে এদের এই সময়ে শরীরের খাদ্যের খুব কম প্রয়োজন পড়ে।
ভাল্লুকঃ
শীতনিদ্রা বিশিষ্ট প্রাণীর তালিকায় শীর্ষে এদের নাম আসে। কিন্তু এরা আসলে শীতনিদ্রায় সম্পূর্ণরূপে যায় না। এরা কমপক্ষে নিজেদের ঘ্রাণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এদিকে ওদিকে চলাফেরা করে সামান্য। এরা শীত যায় না গেলেও টর্পর নামক বিশেষ পদ্ধতিতে নিজেদের রপ্ত করে নেয়। টর্পর পদ্ধতিতে ভাল্লুকের হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার কমে যায়।এজন্য এদের শরীরের তাপমাত্রাও হঠাৎ কমে যায়। তবে এ পদ্ধতিতে ভাল্লুক এরা সহজেই জেগে উঠতে পারে এবং প্রতিক্রিয়া দেখায়। উল্লেখযোগ্য যে এভাবে এরা দীর্ঘদিন না খেয়ে বা পান করে বর্জ্য নিষ্কাশন না করে দীর্ঘদিন থাকতে পারে।
শীতনিদ্রার পাখিঃ
পাখিরা সহজে শীতনিদ্রায় যায় না। কিন্তু এ প্রজাতির পাখি শীতনিদ্রায় থাকার কারণেই আমরা এর সম্পর্কে বেশি কিছু জানতে পারিনি। এরা শুধুমাত্র পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে কিন্তু শীতকালে পোকামাকড় না পাওয়ায় এরা অন্যত্র মাইগ্রেট করে। খাদ্য ঘাটতি এড়ানোর জন্য শীতনিদ্রায় যাওয়ার মাধ্যমে নিজেদের শরীরের বিপাক ক্রিয়া কমিয়ে নেয়।এদের নাম কমন পুরউইল পাখি।
গ্রেটার সাপঃ
অন্য প্রাণীরা এককভাবে শীতনিদ্রায় গেলেও এরা দলবেঁধে শীতনিদ্রায় যায়।এরা ১০০ থেকে ১০০০ পর্যন্ত সাপের সাথে শীতনিদ্রায় যায়।যেহেতু এরা শীতল রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী এজন্য পরস্পরের সংস্পর্শে থেকে এরা নিজেদের কে উষ্ণ রাখতে সহায়তা করে।
বক্স কচ্ছপঃ
প্রজাতি এবং স্থান ভেদে বিভিন্ন ভাবে শীতনিদ্রায় যেয়ে থাকে এরা বছরে তিন থেকে পাঁচ মাসের জন্য শীতনিদ্রায় গিয়ে থাকে। এরা মাটিতে গর্ত করে নিজেদেরকে গর্তের ভেতর লুকিয়ে রাখে।এজন্য এদের হৃদ স্পন্দন মিনিটে ৫ – ১০ বার হয়। এমনও হয় যে এদের হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত থাকে ত্বকের মাধ্যমে।
শামুকঃ
অনেকে মনে করতে পারে শামুক হয়তো শীতনিদ্রায় যায়না। কিন্তু বাস্তবে কিছু কিছু প্রজাতি গিয়ে থাকে। চেতনায় যাওয়ার সময় এরা নিজেদেরকে তাদের খোলসের ভেতর গুটিয়ে নেয় এবং খোলসে প্রবেশের সকল পথ বন্ধ করে দেয়। এজন্য এর ভিতর সর্বদা আদ্রতা বজায় থাকে।গরম এবং ঠাণ্ডা যে আবহাওয়ায় হোক না কেন প্রতিকূল পরিবেশে এরা নিজেদের খোলসের ভেতর গুটিয়ে নেয়।
মারমটঃ
সম্পূর্ণ শীতকাল যদি ঘুমিয়ে কেটে দেওয়া যায় তাহলে কতই না ভালো লাগে? আসলে এ প্রজাতির প্রাণী রা সম্পূর্ণ শীতের সময় ঘুমিয়েই পার করে দেয়। মাঝে মাঝে এরা বছরে ৮ মাসই ঘুমিয়ে পার করে দেয়। এ সময় তারা নিজেদের হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ৩ থেকে ৪ বার এবং শ্বাস প্রশ্বাস মিনিটে ২ – ৩বার হয়ে থাকে।
বাদুড়ঃ
খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলে এবং তাপমাত্রা অনেক কমে আসলে এরা আসিত নিদ্রায় তথা টর্পর পদ্ধতিতে যায়। মাঝে মাঝে সম্পূর্ণ শীতকাল এরা শীতনিদ্রায় কেটে দেয়। এছাড়াও শীতকালে পোকামাকড়ের সংখ্যা অনেক কম থাকায় এরা নিজেদের শরীরের বিপাক ক্রিয়ার হার কমে নেয়। এ সময় এদের হৃদস্পন্দন প্রতি ১০ মিনিটে বার।
হেজহগঃ
এরা যত বেশি শীত অনুভূত করতে পারে তার ওপর নির্ভর করে সপ্তাহ কিংবা মাস ব্যাপী শীতনিদ্রায় গিয়ে থাকে। এ সময় এরা এদের হৃদস্পন্দন শতকরা 90 ভাগ কমিয়ে আনে। যদি ঠান্ডার কারণে বেশি সমস্যা হয় তবে হৃদস্পন্দন দ্রুতই বাড়াতে পারে। এদের সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন
বাম্বেলবিঃ
অন্য প্রজাতির মৌমাছি শীতনিদ্রায় না গেলেও এরা ঠিকই যায়। এ প্রজাতির সকল মৌমাছি শীতনিদ্রা না গ্রহণ করলেও রানী মৌমাছি শীতনিদ্রায় যাবেই। তাপমাত্রা কমে গেলে পুরুষ এবং কর্মী মৌমাছিরা মারা যায়। এসময় রানী মৌমাছিকে উপযুক্ত একটি জায়গায় রেখে শীত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে রানী মৌমাছি নতুন মৌচাক তৈরি করে এবং সেখানে নতুন নতুন পুরুষ এবং কর্মী মৌমাছির জন্ম হয়।
ব্যাঙঃ
অন্য সব প্রাণী শীতনিদ্রা তে গেলেও নিজেদের শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে না। কিন্তু উডফ্রগ প্রজাতির ব্যাঙ নিজেদের শ্বাস-প্রশ্বাস সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে। নিজেদের শরীরের তাপমাত্রা এতটা নিচে নামায় যেন তা বরফকুচির ন্যায় ঠান্ডা। এরা এ অবস্থায় নিজেদেরকে শুকনা কাঠের মধ্যে শুয়ে রাখে সম্পূর্ণ শীতকাল। শেষে গ্রীষ্মের আবির্ভাব হলে পুনরায় এরা শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া শুরু করে এবং শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ফিরে আসে।
পরিশেষে, শীতনিদ্রা তে দক্ষ প্রাণীদের সম্পর্কে বিস্তর জানলাম। পড়ে কেমন লাগল এবং এ সম্পর্কে আপনাদের মতামত কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে শেয়ার করুন।